পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৫২

পরেশবাবু কহিলেন, “বিনয়, তুমি ললিতাকে একটা সংকট থেকে উদ্ধার করবার জন্যে একটা দুঃসাহসিক কাজ করবে এরকম আমি ইচ্ছা করি নে। সমাজের আলোচনার বেশি মূল্য নেই, আজ যা নিয়ে গোলমাল চলছে দুদিন বাদে তা কারো মনেও থাকবে না।”

 ললিতার প্রতি কর্তব্য করিবার জন্যই যে বিনয় কোমর বাঁধিয়া আসিয়াছিল সে বিষয়ে বিনয়ের মনে সন্দেহমাত্র ছিল না। সে জানিত এরূপ বিবাহে সমাজে অসুবিধা ঘটিবে, এবং তাহার চেয়েও বেশি— গোরা বড়োই রাগ করিবে— কিন্তু কেবল কর্তব্যবুদ্ধির দোহাই দিয়া এই-সকল অপ্রিয় কল্পনাকে সে মন হইতে খেদাইয়া রাখিয়াছিল। এমন সময় পরেশবাবু হঠাৎ যখন কর্তব্যবুদ্ধিকে একেবারে বরখাস্ত করিতে চাহিলেন তখন বিনয় তাহাকে ছাড়িতে চাহিল না।

 সে কহিল, “আপনাদের স্নেহ-ঋণ আমি কোনাদিন শোধ করতে পারব না। আমাকে উপলক্ষ করে আপনাদের পরিবারে দুদিনের জন্যেও যদি লেশমাত্র অশান্তি ঘটে তবে সেও আমার পক্ষে অসহ্য।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “বিনয়, তুমি আমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারছ না। আমাদের প্রতি তোমার যে শ্রদ্ধা আছে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি, কিন্তু সেই শ্রদ্ধার কর্তব্য শোধ করবার জন্যেই যে তুমি আমার কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছ এটা আমার কন্যার পক্ষে শ্রদ্ধেয় নয়। সেইজন্যেই আমি তোমাকে বলছিলুম যে, সংকট এমন গুরুতর নয় যে এর জন্যে তোমার কিছুমাত্র ত্যাগ স্বীকার করার প্রয়োজন আছে।”

 যাক‌, বিনয় কর্তব্যদায় হইতে মুক্তি পাইল— কিন্তু খাঁচার দ্বার খোলা পাইলে পাখি যেমন ঝট্‌পট্‌ করিয়া উড়িয়া যায় তেমন করিয়া তাহার মন তো নিষ্কৃতির অবারিত পথে দৌড় দিল না। এখনো সে যে নড়িতে চায়

৩৯১