পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

করে তোমাদের মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছেন কেন।’

 কৃষ্ণদয়াল। ও-সব অনেক কথা, তুমি মেয়েমানুষ সে-সব বুঝবে না। কিন্তু, সমাজ একটা আছে সেটা তো বোঝ, সেটা তোমার মেনে চলাই উচিত।

 আনন্দময়ী। আমার বুঝে কাজ নেই। আমি এই বুঝি যে, গোরাকে আমি যখন ছেলে বলে মানুষ করেছি তখন আচারবিচারের ভড়ং করতে গেলে সমাজ থাক্ আর না থাক্ ধর্ম থাকবে না। আমি কেবল সেই ধর্মের ভয়েই কোনোদিন কিছু লুকোই নে— আমি যে কিছু মানছি নে, সে সকলকেই জানতে দিই আর সকলেরই ঘৃণা কুড়িয়ে চুপ করে পড়ে থাকি। কেবল একটি কথাই লুকিয়েছি তারই জন্যে ভয়ে ভয়ে সারা হয়ে গেলুম ঠাকুর কখন কী করেন। দেখো, আমার মনে হয়, গোরাকে সকল কথা বলে ফেলি, তার পরে অদৃষ্টে যা থাকে তাই হবে।

 কৃষ্ণদয়াল ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “না না, আমি বেঁচে থাকতে কোনোমতেই সে হতে পারবে না। গোরাকে তো জানই। এ কথা শুনলে সে কী যে করে বসবে, তা কিছুই বলা যায় না। তার পরে সমাজে একটা হুলস্থুল পড়ে যাবে। শুধু তাই? এ দিকে গবর্মেণ্ট্, কী করে তাও বলা যায় না। যদিও গোরার বাপ লড়াইয়ে মারা গেছে, ওর মাও তো মরেছে জানি, কিন্তু সব হাঙ্গামা চুকে গেলে ম্যাজেস্টরিতে খবর দেওয়া উচিত ছিল। এখন এই নিয়ে যদি একটা গোলমাল উঠে পড়ে তা হলে আমার সাধন-ভজন সমস্ত মাটি হবে, আরও কী বিপদ ঘটে বলা যায় না।

 আনন্দময়ী নিরুত্তর হইয়া বসিয়া রহিলেন। কৃষ্ণদয়াল কিছুক্ষণ পরে কহিলেন, “গোরার বিবাহ সম্বন্ধে আমি একটা পরামর্শ মনে মনে করেছি। পরেশ ভট্‌চাজ আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ত। যে স্কুল ইন্‌স্পেক্টরি কাজে পেনশন নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় এসে বসেছে। সে ঘোর ব্রাহ্ম। শুনেছি, তার ঘরে অনেকগুলি মেয়েও আছে। গোরাকে তার বাড়িতে যদি ভিড়িয়ে দেওয়া যায় তবে যাতায়াত করতে করতে পরেশের কোনো মেয়েকে তার

৪৪