পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আছে, শশিমুখীর বিয়ে আমি সেই দিনই দিয়ে দেব। গোরা, তোমাকে কিন্তু একটু উদ্‌যোগী হতে হবে। আর দেখো, বিনয়কে কিন্তু আগে থাকতে সাবধান করে দিয়ো, সে যেন সেদিন না এসে পড়ে। অবিনাশ ভারি হিঁদু, সে বিশেষ করে বলে দিয়েছে। তার বিয়েতে যেন ওরকম লোক না আসতে পায়। আর-একটি কথা তোমাকে বলে রাখি ভাই, সেদিন আমার আপিসের বড়ো সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে আনব, তুমি যেন তাদের তেড়ে মারতে যেয়ো না। আর-কিছু নয়, কেবল একটুখানি ঘাড়টা নেড়ে ‘গুড ঈভনিং স্যর’ বললে তোমাদের হিঁদুশাস্ত্র অসিদ্ধ হয়ে যাবে না- বরঞ্চ পণ্ডিতদের কাছে বিধান নিয়ো। বুঝেছ ভাই? ওরা রাজার জাত, ওখানে তোমার অহংকার একটু খাটো করলে তাতে অপমান হবে না।”

 মহিমের কথার কোনো উত্তর না করিয়া গোরা চলিয়া গেল।


৭৬

সুচরিতা যখন চোখের জল লুকাইবার জন্য তোরঙ্গের ‘পরে ঝুঁকিয়া পড়িয়া কাপড় সাজাইতে ব্যস্ত ছিল এমন সময় খবর আসিল, গৌরমোহনবাবু আসিয়াছেন।

 সুচরিতা তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়া তাহার কাজ ফেলিয়া উঠিয়া পড়িল। এবং তখনই গোরা ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল।

 গোরার কপালে তিলক তখনো রহিয়া গেছে, সে সম্বন্ধে তাহার খেয়ালই ছিল না। গায়েও তাহার তেমনি পট্টবস্ত্র পরা। এমন বেশে সচরাচর কেহ কাহারও বাড়িতে দেখা করিতে আসে না। সেই প্রথম গোরার সঙ্গে যেদিন দেখা হইয়াছিল সেই দিনের কথা সুচরিতার মনে পড়িয়া গেল। সুচরিতা জানিত, সেদিন গোরা বিশেষ করিয়া যুদ্ধের বেশে আসিয়াছিল-আজও কি এই যুদ্ধের সাজ!

 গোরা আসিয়াই একেবারে মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া পরেশকে প্রণাম

৫৮৭