পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

লেখমালা।

মস্তকে সাধু সাধু বলিয়া কীর্ত্তন করাইতে করাইতে, হৃষ্টচিত্ত পাঞ্চালবৃদ্ধকর্ত্তৃক মস্তকোপরি আত্মাভিষেকের স্বর্ণকলস উদ্ধৃত করাইয়া, কন্যকুব্জকে [অভিষিক্ত করাইয়া] রাজশ্রী প্রদান করিয়াছিলেন।[১]

(১৩)

 সীমান্তদেশে গোপগণকর্ত্তৃক, বনে বনেচরগণকর্ত্তৃক, গ্রামসমীপে জনসাধারণকর্ত্তৃক, [গৃহ] চত্বরে ক্রীড়াশীল শিশুগণকর্ত্তৃক, প্রত্যেক ক্রয়বিক্রয়স্থানে বণিক্‌সমূহ (?) কর্ত্তৃক, এবং বিলাসগৃহের পিঞ্জরস্থিত শুকগণকর্ত্তৃক গীয়মান আত্মস্তব শ্রবণ করিয়া, [এই নরপতির] বদনমণ্ডল লজ্জাবশে নিয়ত ঈষৎ বক্রভাবে বিনম্র হইয়া রহিয়াছে।[২]

 যেখানে[৩] ভাগীরথী-প্রবাহ-প্রবর্ত্তমান নানাবিধ [নৌবাটক[৪]] রণতরণী [সুবিখ্যাত] সেতুবন্ধ-

  1. শ্রীধর্ম্মপালদেব [কান্যকুব্জেশ্বর] ইন্দ্ররাজকে পরাভূত করিয়া তাঁহার [মহোদয় নামক] কান্যকুব্জ-রাজ্যে চক্রায়ুধ নামক আপন সামন্তনরপালকে অভিষিক্ত করিবার কথা নারায়ণপালদেবের [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৩য় শ্লোকে] উল্লিখিত আছে। ধর্ম্মপাল কান্যকুব্জের স্বাধীনতা হরণ করিয়াও, তাহার জন্য একজন স্বতন্ত্র রাজা নিযুক্ত করায়, কান্যকুব্জ পুনরায় রাজশ্রী প্রাপ্ত হইয়াছিল; এবং [তদ্দেশের নিকটবর্ত্তী] অন্যান্য জনপদের নরপালগণও সাধু সাধু বলিয়া তৎকার্য্যের সাধুবাদ করিয়াছিলেন।
  2. ধর্ম্মপাল কিরূপ লোকপ্রিয় ছিলেন, এই শ্লোকে তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। পরবর্ত্তীকালে বরেন্দ্রমণ্ডলের ঘরে ঘরে মহীপালের গীত প্রচলিত হইয়াছিল। হয়ত একসময়ে ধর্ম্মপালের গীতও সেই ভাবে সকল স্থানেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই শ্লোক ভিন্ন, তাহার অন্য কোনরূপ উল্লেখ সাহিত্যে বা জনশ্রুতিতে বর্ত্তমান নাই। এই শ্লোকের “मानप” শব্দ অপরিচিত, এবং “त्रपाविवलितानम्रं” একটি উল্লেখযোগ্য রচনা-মাধুর্য্যের নিদর্শন। বটব্যাল মহাশয় ইহাকে “त्रपाविचलितानम्रं” পাঠ করায়, ইহা একটি রচনা-দোষের নিদর্শন বলিয়াই প্রতিভাত হইয়াছিল। অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ প্রকৃত পাঠ মুদ্রিত করিবার পরেও, বটব্যাল মহাশয়ের উদ্ধৃত পাঠই “গৌড়ের ইতিহাসে” মুদ্রিত হইয়াছে। সজ্জনগণ লজ্জায় “বিবলিত” হইতে পারেন; কিন্তু [কাহারও পক্ষেই] লজ্জায় “বিচলিত” হইবার সম্ভাবনা নাই। “त्रपाविवलितानम्रं सदैवाननं” ব্যাখ্যা করিবার জন্য অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ লিখিয়া গিয়াছেন,—“He always bashfully turns aside and bows down his face”.—Epigraphia Indica Vol. IV., P. 252.
  3. পালবংশীয় নরপালগণের সকল তাম্রশাসনেই [বংশবিবৃতিসূচক শ্লোকাবলীর শেষে] এই গদ্যাংশের আরম্ভ দেখিতে পাওয়া যায়, এবং ইহাতেই তাঁহাদের “জয়স্কন্ধাবারের” পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু এই গদ্যাংশে অপ্রচলিত সংজ্ঞাশব্দের বাহুল্য এবং লিপিকর-প্রমাদের আতিশয্য বর্ত্তমান থাকায়, এপর্য্যন্ত কোন ভাষায় ইহার আদ্যন্তের মূলানুগত অনুবাদ প্রকাশিত হইতে পারে নাই। প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় মদনপালদেবের [মনহলিগ্রামে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনের একটী সম্পূর্ণ বঙ্গানুবাদ “সাহিত্যপরিষৎ-পত্রিকায়” [১৩০৫ সালের দ্বিতীয় সংখ্যার ১৫৬-১৫৭ পৃষ্ঠায়] প্রকাশিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। নানা কারণে, তাহাকে মূলানুগত অনুবাদ বলিয়া স্বীকার করিতে সাহস হয় না।
  4.  পালবংশীয় নরপালগণের কোন কোন তাম্রশাসনে “নৌবাটক” এবং কোন কোন তাম্রশাসনে “নৌবাট”-শব্দ উৎকীর্ণ আছে। নারায়ণপালদেবের [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনের গদ্যাংশের ইংরাজি অনুবাদসাধনে প্রবৃত্ত হইয়া, ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্র “নৌবাটক” শব্দের “নৌ-সেতু” অর্থ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। ডাক্তার হুল্‌জ্ তৎপ্রতি কটাক্ষ করিয়া, সে ব্যাখ্যা গ্রহণ করিতে না পারিয়া, [Indian Antiquary vol. XV., p. 309, Note 29] লিখিয়া গিয়াছেন,—“R. Mitra concludes from this passage that Náráyanapáladeva had made a bridge of boats across the Ganges. But the two words pravartamána and nánávidha render this explanation inadmissible. The panegyrist merely wants

২২