পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
চতুরঙ্গ

আমার তো পয়সা নাই। জ্যাঠামশায় উহাদের নিমন্ত্রণ করিয়াছেন।”

 পুরন্দর রাগিয়া ছটফট করিয়া বেড়াইতেছিল। সে বলিতেছিল, “কেমন উহারা এ বাড়িতে আসিয়া খায় আমি দেখিব।”

 হরিমোহন দাদার কাছে আপত্তি জানাইলে জগমোহন কহিলেন, “তোমার ঠাকুরের ভোগ তুমি রোজই দিতেছ, আমি কথা কই না— আমার ঠাকুরের ভোগ আমি একদিন দিব, ইহাতে বাধা দিয়ো না।”

 “তোমার ঠাকুর?”

 “হাঁ, আমার ঠাকুর।”

 “তুমি কি ব্রাহ্ম হইয়াছ।”

 “ব্রাহ্মরা নিরাকার মানে, তাহাকে চোখে দেখা যায় না। তোমরা সাকারকে মান, তাহাকে কানে শোনা যায় না। আমরা সজীবকে মানি, তাহাকে চোখে দেখা যায়, কানে শোনা যায়— তাহাকে বিশ্বাস না করিয়া থাকা যায় না।”

 “তোমার এই চামার মুসলমান দেবতা?”

 “হাঁ, আমার এই চামার মুসলমান দেবতা। তাহাদের আশ্চর্য এই এক ক্ষমতা প্রত্যক্ষ দেখিতে পাইবে তাহাদের সামনে ভোগের সামগ্রী দিলে তাহারা অনায়াসে সেটা হাতে করিয়া তুলিয়া খাইয়া ফেলে। তোমার কোনো দেবতা তাহা পারে না। আমি সেই আশ্চর্য রহস্য দেখিতে ভালোবাসি, তাই আমার ঠাকুরকে আমার ঘরে ডাকিয়াছি; দেবতাকে দেখিবার চোখ যদি তোমার অন্ধ না হইত, তবে তুমি খুশি হইতে।”