পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুকোণ 莓 অস্বাভাবিক মিথ্যা অসংযমকেই তারা স্বাভাবিক সত্য বলিয়া জানিতে শিখিয়াছে। মানুষ কেবল পরের নয় নিজেরও সংযমকেই বিশ্বাস করে না । অসংযমের চেয়ে সংযম যে মানুষের পক্ষে বেশী স্বাভাবিক, এ যেন কেউ কল্পনাও করিতে পারে না । হঠাৎ রিনির গান বন্ধ হইয়া যাওয়ায় রাজকুমার সচেতন হইয়া উঠিল যে সিড়ির মাঝখানে সে অনেকক্ষণ দাড়াইয়া আছে । তাড়াতাড়ি সে নীচে নামিয়া গেল । নীচে হলঘরের এক কোণে অবনীবাবুর মেয়ে মালতী বসিয়াছিল। সামনে ছোট টেবিলটিতে একটি বই ও খাত। খুব সম্ভব কলেজ হইতে ফিরিবার সময় সরাসরি কে. এল-এর বাড়িতে ঢুকিয়াছে। এখানে একা বসিয়া দু'হাতের আটটি আঙুলে টেবিলের উপর টােকা দিয়া টুকটাক আওয়াজ তুলিবার কারণটা রাজকুমার ঠিক বুঝিতে পারিল না। আট আঙুলে টােকা দেওয়ার কারণ নয়, এখানে একা বসিয়া থাকিবার কারণ। মালতী বড় চঞ্চল। চাঞ্চল্যটা শুধু আঙলে সীমাবদ্ধ রাখিয়া সে যে স্থির হইয়া বসিয়া আছে এটা সত্যই আশচর্যের ব্যাপার । রাজকুমারকে দেখিবামাত্র টোকা দেওয়া থামিয়া গেল। চোখেমুখে তার যে দুষ্টামি ভরা চকিত হাসি খেলিয়া গেল, বনের হরিণী হাসিতে জানিলেও তার নকল করিতে পারিত না। সোজাসুজি তাকানাের বদলে মাথা একটু কাত করিয়া কোণাকুণি রাজকুমারের দিকে তাকাইয়া বলিল, এর মধ্যে তাড়িয়ে দিল ? --তাড়িয়ে দিল মানে ? -ও, তাড়িয়ে দেয় নি ? আপনি নিজে থেকে চলে যাচ্ছেন ? আমি ভাবলাম আপনাদের বুঝি ঝগড়া হয়েছে, আপনাকে তাড়িয়ে দিয়ে রিনি বিনিয়ে বিনিয়ে কঁদছে। -কঁদছে নাকি ? --দিনরাত কঁাদে মেয়েটা, সময় নেই অসময় নেই। আচ্ছ,