পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোণ V98 মাদ্রাজী মেয়েটি আবার উঠিয়া দাড়াইয়া প্ৰতিবাদ জানাইল, এটা কি ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে না ? স্যার কে. এল. হাসিমুখেই সায় দিয়া বলিলেন, খানিকট হচ্ছে বৈকি! শ্যামল জোর দিয়া বলিল, না না, ব্যক্তিগত আক্রমণ হবে কেন, রাজকুমারবাবুর সঙ্গে তো আমার শক্ৰতা নেই! আমি বলছিলাম, মাদ্রাজের নারীদের অবস্থা সম্বন্ধে রাজকুমারবাবুর ধারণা খুব স্পষ্ট নয়, তিনি তাই বিশ্বের নারীজাতির কথা তুলেছিলেন, সমগ্রতার অস্পষ্টতায় যাতে খুটিনাটির অভাবট চাপা পড়ে যায়। মাদ্রাজের নারীরাও বিশ্বের নারীজাতির অন্তৰ্গত বৈ কি ! মাদ্রাজের নারীদের সম্বন্ধে রাজকুমারবাবু যে সব কথা বলেছেন তার অধিকাংশই বিশ্বের যে কোন দেশের নারীজাতির সম্বন্ধে বলা যায়। মাদ্রাজী মেয়েদের একটিমাত্র বৈশিষ্ট্যের কথা রাজকুমারবাবু স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যুগোপযোগী সংস্কারকে অত্যন্ত সহজে গ্ৰহণ করবার অশিক্ষিত পটুতা তাদের নাকি বিস্ময়কর! স্কুল কলেজের শিক্ষার হিসাবে তারা নাকি ভারতের অন্যান্য প্রদেশ, বিশেষ করে বাংলার তুলনায় অনেক পিছনে পড়ে আছেন, কিন্তু জীবনযাত্রাকে নতুন ছাঁচে ঢালবার চেষ্টায় সব প্ৰদেশকে হার মানিয়েছেন। এ ধারণা রাজকুমারবাবু যে কোথায় পেলেন কল্পনা করা কঠিন। মাদ্রাজের মেয়েরা তাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে বিশেষ কোন সংস্কারের আমদানী করেছেন, অথবা ও বিষয়ে তঁদের উল্লেখযোগ্য উৎসাহ দেখা গিয়েছে বলে তো মনে হয় না। নতুন আলো চােখে লাগা আর সেই আলোয় নতুন দৃষ্টিতে জীবনকে যাচাই করার অসুবিধা ও সুযোগের অভাব অন্য সব প্রদেশের মত মাদ্রাজের মেয়েদেরও কিছুমাত্র কম নয়। রাজকুমার চুপ করিয়া শুনিতেছিল এবং ভাবিতেছিল, এইবার সে উঠিয়া দাড়াইল। সব সময় তার মুখে যে মৃদু একটু বিবৰ্ণতার ছাপ থাকে, রাগে এখন তাহা মুছিয়া গিয়াছে। তবু সে শান্ত কণ্ঠেই বলিল,