দেখ্ছি পাগল হ’য়ে গেলেন। আমেরিকার কামানের গোলা আর তবে চন্দ্রলোকে যায় না।”
দেখিতে দেখিতে টম্পানগরের লোক সংখ্যা দ্বিগুণ, ত্রিগুণ, চতুর্গুণ হইয়া উঠিল। নগরে খাদ্যের অভাব হইতে আরম্ভ হইল। মাইকেল আর্দ্দানকে দেখিবার জন্য কেহ জাহাজে, কেহ রেলে, কেহ লঞ্চে টম্পামুখে ছুটিল! টম্পার পার্শ্ববর্ত্তী ক্ষেত্রসমূহ শত সহস্র পট্টাবাসে আচ্ছাদিত হইয়া বস্ত্রের নগররূপে প্রতিভাত হইতে লাগিল।
২০শে অক্টোবর প্রভাতে দেখা গেল, দূরে দিগ্বলয়ের কাছে জাগজের ধূম। সমুদ্র-তীরে লোকারণ্য হইল। সন্ধ্যার সময় বিপুল হলহলা রব মধ্যে যখন জাহাজ আসিয়া ঘাটে ভিড়িল, তখন ক্ষুদ্র বৃহৎ পাঁচ ছয় শত তরণী উহাকে ঘিরিয়া ধরিল।
সর্ব্বাগ্রে জাহাজে উঠিয়া বার্বিকেন কহিলেন,—“মাইকেল আর্দ্দান!”
একজন আরোহী উত্তর দিলেন,—“এই যে হাজির!”
বার্বিকেন নিরুদ্ধ-নিঃশ্বাসে তাঁহার মুখের দিকে চাহিলেন। দেখিলেন, আর্দ্দানের বয়স চল্লিশের অধিক হইবে না। তাঁহার দীর্ঘ দেহ, মস্তক অপেক্ষাকৃত বৃহৎ। সেই বৃহৎ মস্তকে ধূসরবর্ণ কেশদাম মন্দ পবনে উড়িতেছে—যেন সিংহের কেশর দুলিতেছে। তাঁহার আয়ত ললাট একটু উচ্চ। গুম্ফ মার্জ্জার-গুম্ফের ন্যায় দীর্ঘ, নাসিকা বংশীর ন্যায়, নয়নদ্বয় উজ্জ্বল। তাঁহার বাহুযুগল সবল—দেহ সুগঠিত—চলনভঙ্গী শক্তি জ্ঞাপক। তাঁহার পরিচ্ছদ শ্লথ-বিন্যস্ত, জামার আস্তিন্ বোতানশূন্য!
ফ্রান্সে এবং য়ুরোপে মাইকেল আর্দ্দানকে সকলেই জানিত।