পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৯৯

রজনী গভীর হোলো, দীপ নিবে আসে;
পদ্মার সুদূর পারে পশ্চিম আকাশে
কখন-যে সায়াহ্নের শেষ স্বর্ণ-রেখা
মিলাইয়া গেছে, সপ্তর্ষি দিয়েছে দেখা
তিমিরগগনে, শেষ ঘট পূর্ণ ক’রে
কখন বালিকা বধূ চলে গেছে ঘরে।
হেরি’ কৃষ্ণপক্ষ রাত্রি একাদশী তিথি
দীর্ঘপথ, শূন্যক্ষেত্র, হয়েছে অতিথি
গ্রামে গৃহস্থের ঘরে পান্থ পরবাসী,—
কখন্‌ গিয়েছে থেমে কলরবরাশি
মাঠপারে, কৃষি-পল্লী হতে নদীতীরে
বৃদ্ধ কৃষাণের জীর্ণ নিভৃত কুটীরে
কখন জ্বলিয়াছিল সন্ধ্যা-দীপখানি,
কখন নিভিয়া গেছে—কিছুই না জানি।
কী কথা বলিতেছিনু কী জানি, প্রেয়সী,
অর্ধ-অচেতনভাবে মনোমাঝে পশি’
স্বপ্নমুগ্ধমতো। কেহ শুনেছিলে সে কি
কিছু বুঝেছিলে, প্রিয়ে, কোথাও আছে কি
কোনো অর্থ তার। সব কথা গেছি ভুলে’,
শুধু এই নিদ্রাপূর্ণ নিশীথের কূলে
অন্তরের অন্তহীন অশ্রু-পারাবার
উদ্বেলিয়া উঠিয়াছে হৃদয়ে আমার
গভীর নিঃস্বনে।
এসো সুপ্তি, এসো শান্তি,
এসো প্রিয়ে, মুগ্ধ মৌন সকরুণ কান্তি,
বক্ষে মোরে লহ টানি’,—শোয়াও যতনে
মরণ- সুস্নিগ্ধ শুভ্র বিস্তৃতি শয়নে।

শিলাইদহ। বোট।
৪ পৌষ, ১২৯৯
—সোনার তরী