বসাইয়াছে, তাহা নহে। বর্ত্তমান কালে কোনো কোনো য়ুরোপীয় সিদ্ধাস্তেও তার প্রায় অনুরূপ মর্য্যাদাই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। অষ্টাদশ খৃষ্টশতাব্দীর য়ুরোপীয় চিন্তা, অতিপ্রাকৃত শাস্ত্রপ্রামাণ্য বর্জ্জন করিয়াও সমাজ-স্থিতিরক্ষার্থে একটা বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিপ্রতিষ্ঠ মরালিটীর বা ধর্ম্মনীতির আশ্রয় গ্রহণ করিতে যাইয়া, ফলতঃ লৌকিকাচারকেই ধর্ম্মের আসনে বসাইয়াছে। প্রত্যক্ষবাদী কোমত্-সিদ্ধান্তেও আমাদেরই শঙ্কর—বেদান্তের ন্যায়, সমাজ-বিবর্ত্তনে সমাজের গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মধে একটা সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য রক্ষা করিবার জন্য, এই লৌকিকাচারই প্রত্যক্ষ ধর্ম্ম বলিয়া গৃহীত হইয়াছে। কোমত্সিদ্ধান্ত-বাদিগণ, ইংরেজিতে যাঁহাদিগকে পজিটিভিষ্ট্ (Positivist) সম্প্রদায় বলে, —একদিকে যেমন সামাজিক উন্নতির জন্য লালায়িত, সেইরূপ অন্যদিকে সমাজের স্থিতিভঙ্গ-নিবারণের জন্যও একান্ত ব্যগ্র হইয়া থাকেন। তাঁরা কিছুতেই, কার্যতঃ, সমাজের প্রচলিত বিধিব্যবস্থা ও রীতিনীতির প্রভাব নষ্ট করিতে প্রস্তুত নহেন। তাঁহাদের নিকটেও সমাজই ধর্ম্মের কায়ব্যূহস্বরূপ। ক্যাথলিক খৃষ্টীয়মণ্ডলী মধ্যে চার্চ্চ বা রোমক-খৃষ্টীয় সঙ্ঘ যে মর্য্যাদা প্রাপ্ত হয়, ধর্ম্মের বহিঃপ্রকাশ বলিয়া সকলে যেরূপ এই চার্চ্চের বা সঙ্ঘের আনুগত্য স্বীকার করিয়া চলে, প্রত্যক্ষবাদী কোমত্মতাবলম্বিগণ মধ্যে সমাজ সেইরূপ মর্য্যাদাই প্রাপ্ত হয়, এবং সমাজের আনুগত্য মানিয়া চলা, কোমত্মতে নিতান্তই নীতিসঙ্গত বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। কোমত্— মতের সঙ্গে মধ্যযুগের হিন্দুয়ানীর এই সমাজানুগত্য বা লৌকিকা চারানুগত্যের একটা যে ঐকা আছে, বাঙ্গালী হিন্দুদিগের মধ্যে যাঁরা কোমত্মত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাঁহাদের শিক্ষায় ও চরিত্রে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। খিদিরপুরের জমিদার, স্বর্গীয় যোগীন্দ্রচন্দ্র ঘোষ,ন্যাশন পত্রের সুযোগ্য সম্পাদক স্বর্গীয় নগেন্দ্রনাথ ঘোষ, ইহাঁরা দু’জনেই
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১২৫
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
চরিত-কথা