বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
চরিত-কথা

সে কালের বিলাত-প্রত্যাগত বাঙ্গালী হিন্দুদের সঙ্গে, তাঁহাদের প্রাচীন পৈতৃক সমাজের কোনো প্রকারের যোগাযোগ প্রায়ই থাকিত না। সমাজও তাঁহাদিগকে পতিত বলিয়া বাহিরে ফেলিয়া রাখিত। আর তাঁহারা নিজেরাও সাহেব সাজিয়া, সহধর্ম্মিণীকে গাউন পরাইয়া মেম সাজাইয়া, “নেটিভ্‌দের” সঙ্গে প্রমুক্তভাবে মেশামেশি করিলে কি জানি এই সদ্যলব্ধ সভ্যতার মর্য্যাদাভ্রষ্ট হইয়া পড়েন, সেই ভয়ে আপনাদের সমাজ হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকিতে চেষ্টা করিতেন। সুরেন্দ্রনাথও প্রথম বয়সে তাহাই করিয়াছিলেন। আর বিধাতার চক্রান্তে ও তাঁর স্বদেশের সুকৃতি বলে, সুরেন্দ্রনাথের সিভিলিয়ানী-পদ যদি খসিয়া না পড়িত, তাহা হইলে আজি পর্য্যন্তও তিনি এই ভয়াবহ পরধর্ম্মের বোঝাই বহন করিয়া চলিতেন। অতএব এই সকল ঘটনাবশে সুরেন্দ্রনাথের ভাগ্যে যে স্বদেশের ও স্বজাতির সভ্যতা ও সাধনার নিগূঢ় প্রকৃতির সাক্ষাৎকার লাভ ঘটে নাই, ইহা কিছু বিচিত্র নহে।

 সুরেন্দ্রনাথের প্রাণের টান্‌টা পুরাদমেই স্বদেশাভিমুখী হইলেও তাঁর মত, প্রকৃতি এবং ভিতরকার ভাব ও আদর্শ যে সত্যই স্বদেশী, এমন বলা যায় না। শুদ্ধ সাত্ত্বিকী প্রকৃতিই আমাদের স্বদেশী চরিত্রের চিরন্তন আদর্শ। যেমন ভিন্ন ভিন্ন লোকে সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ এই তিন গুণের কোনও না কোনও একটা গুণ অপর দুই গুণকে অভিভূত করিয়া, তাহাদের প্রকৃতিকে বিশেষ ভাবে সাত্ত্বিক, বা রাজসিক, বা তামসিক করিয়া তোলে, সেইরূপ ভিন্ন ভিন্ন জাতির প্রকৃতিতেও গুণ বিশেষের প্রাধান্য ঘটিয়া থাকে। কোনও জাতি বা এই জন্য তামসিক, আর কেহ বা রাজসিক, আর কেহ বা সাত্ত্বিক প্রকৃতির হয়। কোনও জাতির সভ্যতা ও সাধনা রজঃ-প্রধান, আর কাহারও বা তমোপ্রধান, আর কোনও জাতির সভ্যতা ও সাধনা বা সত্ত্ব-প্রধান হইয়া থাকে। য়ুরোপের সভ্যতা ও সাধনা