বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ও ব্রাহ্মসমাজ
১৪৫

তার চাইতে উপরে থাকে। আর এরই জন্য মোটের উপরে এই গতি সর্ব্বদাই ঊর্দ্ধমুখী হইয়া পরিণামে চরম উন্নতি লাভ করে। সমাজবিবর্ত্তনের ধারাও ঠিক এইরূপ।

 সমাজ এই বক্রগতিতে চলিয়া, এক একবার নামিয়া আসিয়া আবার উপরে উঠিতে তিনটী অবস্থার ভিতর দিয়া যায়। আধুনিক সমাজতত্ত্ববিদ পণ্ডিতেরা ইহার প্রথম অবস্থাকে ইংরেজিতে homogeneityর বা নির্ব্বিশেষ-একাকারত্বের অবস্থা বলেন। দ্বিতীয় অবস্থাকে differen tiationএর বা বিশিষ্ট বহুত্বের ও পার্থক্যের অবস্থা বলেন। তৃতীয় অবস্থাকে integrationএর বা মিলনের, সামঞ্জস্যের, একত্বের অবস্থা বলিয়া থাকেন। এই কথা তিনটী জীবজগতের বিবর্ত্তনের ইতিহাস হইতেই মূলে গৃহীত হইয়াছে। সামাজিক বিবর্ত্তনে এই অবস্থাগুলির অন্যরূপ নাম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আমাদের শাস্ত্রীয় পরিভাষা ব্যবহার করিলে, বিবর্ত্তনের প্রথম পাদ বা প্রথম অবস্থাকে তামসিক, মধ্যমপাদ বা মধ্যের অবস্থাকে রাজসিক এবং শেষের পাদকে বা অবস্থাকে সাত্ত্বিক বলাই সঙ্গত হইবে। আমাদের পৌরাণিকী কাহিনীর সৃষ্টিপ্রকরণে এই বিবর্ত্তন-ক্রমটীই ব্যক্ত হইয়াছে।

 সৃষ্টির আদি অবস্থা নির্ব্বিশেষ একাকারত্বেরই অবস্থা। ইংরেজিতে ইহাকে স্বচ্ছন্দেই hoinogeneityর অবস্থা বলা যাইতে পারে। আমাদের পৌরাণিকী কাহিনী নিখিল বিশ্বের বীজরূপী, অপঞ্চীকৃত-পঞ্চমহাভূতাত্মক অণ্ডমধ্যে ব্রহ্মাণ্ডের বিবর্ত্তনশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। অণ্ড-বস্তুর লক্ষণ নির্ব্বিশেষত্ব ও একাকারত্ব। কারণাদ্ধিমধ্যে, এই অপঞ্চীকৃত-পঞ্চমহাভূতাত্মক অণ্ডের ভিতরে, সৃষ্টির পূর্ব্বে, হিরণ্যগর্ভ বা মহাবিষ্ণু যোগনিদ্রাভিভূত হইয়া থাকেন। সাংখ্যদর্শন এই তত্ত্বকেই অব্যক্ত বা প্রকৃতি বলিয়াছেন। এই তত্ত্বে সত্ত্ব, রজঃ,