মহর্ষি হাফেজ প্রভৃতি মোহম্মদীয় ভক্তগণেরই পন্থা অবলম্বন করিয়াছিলেন, লৌকিক ন্যায় ও য়ুরোপীয়-যুক্তিবাদ-প্রতিষ্ঠিত মামুলী ব্রাহ্মধর্ম্মের পন্থার অনুসরণ করেন নাই। এই গভীর ভাবাঙ্গসাধনের গুণেই মহর্ষির ব্রাহ্মধর্ম্ম Deism হয় নাই, কিন্তু অতি উচ্চদরের Theism রূপেই তাঁর জীবনে ও চরিত্রে ফুটিয়া উঠিয়াছিল। কেশবচন্দ্রের ঈশ্বরও শক্তিমাত্র ছিলেন না। কারণ কেশবচন্দ্রের প্রখর সংজ্ঞানের বা conscience এর প্রেরণায় প্রথম হইতেই তাঁর ঈশ্বরতত্ত্বে একটা উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের প্রতিষ্ঠা হয়। মহর্ষি ভাবাঙ্গ-সাধনের ভিতর দিয়া, মোহম্মদীয় ভক্তগণের দৃষ্টান্ত ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে, তাঁহার নিজের জীবনের প্রতাক্ষ ঈশ্বরতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করেন। কেশবচন্দ্র প্রথম যৌবনে, তাঁর গভীর পাপ-বোধের বা Ethical Consciousness এর ভিতর দিয়া, খৃষ্টীয়ান সাধকগণের দৃষ্টান্তে, ও শিক্ষায় আপনার প্রত্যক্ষ ঈশ্বরতত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাহ্মসমাজে ইঁহারা উভয়েই যে তত্ত্ব-সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করেন, তাহার উপরে Deism এরই প্রতিষ্ঠা হয়; Theismএর প্রতিষ্ঠা হয় না। কিন্তু এ সত্ত্বেও মহর্ষির এবং কেশবচন্দ্রের নিজেদের প্রত্যক্ষ ঈশ্বরতত্ত্ব যে Theism হইয়া উঠে, ইহাদের প্রকৃতির ও সাধনার বিশেষত্বই ইহার প্রধান ও একমাত্র কারণ।
ফলতঃ শুদ্ধ যুক্তিবাদের উপরে কোনও প্রকারের গভীর ধর্ম্মতত্ত্ব ও ধর্ম্মসাধনকে গড়িয়া তুলা যে অসম্ভব, মহর্ষি এবং কেশবচন্দ্র উভয়েই ইহা ক্রমে অনুভব করিয়াছিলেন। এইজন্য ইঁহারা জীবনের শেষ পর্য্যন্ত এই যুক্তিবাদকে ধরিয়া থাকিতে পারেন নাই। ঈশ্বরানুপ্রাণিত হইয়া সাধক অনুকূল অবস্থাধীনে সত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়া থাকেন এবং ধর্ম্মবস্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রাকৃত-বিচার-বুদ্ধির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় না, কিন্তু এই সকল ঈশ্বরানুপ্রাণিত সাধু মহাজনের সাক্ষ্যের উপরেই