ফরাসীয় চিন্তানায়কগণের শিক্ষা-দীক্ষার ভিতর দিয়া সাক্ষাৎভাবে শিবনাথ বাবু বা তাঁর সহযোগী ব্রাহ্মগণের উপরে আসিয়া পড়ে নাই। ইংলণ্ডের ও আমেরিকার যুক্তিবাদী খৃষ্টীয়ান সম্প্রদায়ের আচার্য্যগণের শিক্ষা-দীক্ষা হইতেই আমাদের ব্রাহ্মসমাজ য়ুরোপীয় ‘সাম্যমৈত্রীস্বাধীনতা’র উদ্দীপনা লাভ করেন। আর ইঁহাদের মধ্যে ইংলণ্ডের ফ্রান্সেস নিউম্যান এবং আমেরিকার থিওডোর পার্কারের সঙ্গেই ব্রাহ্মসমাজের সর্ব্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ যোগ স্থাপিত হয়। শিবনাথ বাবুর প্রথম যৌবনকালে পার্কারই ব্রাহ্মসমাজের যুক্তিবাদী যুবকদলের প্রধান শিক্ষা গুরু হইয়াছিলেন। কিন্তু যে দার্শনিক ভিত্তির উপরে পার্কারের ধর্ম্ম-সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা হয়, তাঁর ভারতবাসী শিষ্যগণ সে তত্ত্বকে ভাল করিয়া ধরিয়াছিলেন কি না, সন্দেহের কথা। শিবনাথ বাবু প্রভৃতি পার্কারের দুর্দ্দমনীয় অনধীনতা প্রবৃত্তি এবং উদার ও বিশ্বজনীন মানব-প্রেমের উদ্দীপনাই কতকটা লাভ করেন, কিন্তু পার্কারের তত্ত্বজ্ঞান বা ভক্তিভাব লাভ করিরাছিলেন কি না, বলা সহজ নয়।
ফলতঃ সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের নেতৃপদে বৃত হইবার পূর্ব্বে শিবনাথ বাবুর ধর্ম্মজীবন অপেক্ষা কর্ম্মোৎসাহই বেশী ফুটিয়া উঠিয়াছিল। উপাসনাদি অন্তরঙ্গ ধর্ম্মকর্ম্মে তাঁর যতটা উৎসাহ ও নিষ্ঠা ছিল, সমাজ-সংস্কারে তখন যে তদপেক্ষা অনেক বেশী আগ্রহ ছিল, হহা অস্বীকার করা অসম্ভব। এ সময়ে তিনি উপাসনা-প্রার্থনাদি ব্রাহ্মধর্ম্মের অন্তরঙ্গ সাধনকেও যে লৌকিক ন্যায়ের বিশুদ্ধ তর্কযুক্তির কষ্টিপাথরে কসিতেছিলেন, তাঁর সম্পাদিত “সমদর্শী”ই ইহার সাক্ষী। কেশবচন্দ্র ও তাঁর অনুগত প্রচারকগণ যে শিবনাথ বাবুর সে সময়ের ধর্ম্মভাবকে বড় বিশেষ শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেন না, ইহাও জানা কথা। কেশবচন্দ্র ব্রাহ্মসমাজে বৈরাগ্য-সাধন প্রবর্ত্তিত করিবার প্রয়াসী হইলে, শিবনাথ বাবু তাঁর এ সকল