এখনও বনের মধ্যে ঘুরচি। আজ সেই গাছটা আবার দেখেচি, সেই D. A. লেখা। অথচ তোমার মনে আছে, আমারা যতদূর সম্ভব পশ্চিমদিক ঘেঁসে চলেচি পনেরো দিন। কি করে আমরা আবার সেই গাছের কাছে আসতে পারি?
শঙ্কর বল্লে - তবে এখন কি উপায়?
— উপায় আছে। আজ রাত্রে একটা বড় গাছের মাথায় উঠে নক্ষত্র দেখে দিকনির্ণয় করতে হবে। তুমি তাঁবুতে থেকো।
শঙ্কর একটা কথা বুঝতে পারছিল না। তারা যদি চক্রাকারে ঘুরচে, তবে এই অনুচ্চ শৈলমালা ও গুহার দেশে কি করে এল? এ অঞ্চলে তো কখনো আসে-নি বলেই মনে হয়। আলভারেজ এর উত্তরে বল্লে, গাছটাতে নাম খোদাই দেখে সে আর কখনো তার পূর্ব্বে আসবার চেষ্টা করে নি। পূর্ব্ব দিকে মাইল দুই এলেই এই স্থানটাতেই ওরা পৌঁছতো।
সে রাত্রে শঙ্কর একা তাঁবুতে বসে বঙ্কিমচন্দ্রের 'রাজসিংহ' পড়ছিল। এই একখানা বই সে দেশ থেকে আসবার সময় সঙ্গে করে আনে, এবং বহুবার পড়লেও সময় পেলেই আবার পড়ে।
কতদূরে ভারতবর্ষ, তার মধ্যে চিতোর, মেওয়ার, মোগল-রাজপুতের বিবাদ! এই অজানা মহাদেশের অজানা মহা অরণ্যানীর মধ্যে বসে সে সব যেন অবাস্তব বলে মনে হয়।