পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ò R চরিত্রপূজা। পুরাতন জুতা, কেহ বা বিজ্ঞাপনের ছবি জমাইতে থাকে-সেই নেশার রোখি যতোই চড়িতে থাকে, ততোই এইসকল জিনিষের একটা কৃত্ৰিম মূল্য অসম্ভবক্সপে বাড়িয়া উঠে। তেমনি যুরোপে মৃত বড়লোক জমাইবার যে একটা প্ৰচণ্ড নেশা আছে, তাহাতে মূল্যের বিচার আর থাকে না। কাহাকেও আর বাদ দিতে ইচ্ছা করে না । যেখানে একটুমাত্র উচ্চতা বা বিশেষত্ব আছে, সেইখানেই যুরোপ তাড়াতাড়ি সিঁদুর মাখাইয়া দিয়া ঘণ্টা নাড়িতে থাকে। দেখিতে দেখিতে দল জুটিয়া যায়। বস্তুত মাহান্ত্ৰ্যের সঙ্গে ক্ষমতা বা প্ৰতিভার প্রভেদ আছে । মহাআত্মারা আমাদের কাছে এমন একটি আদর্শ রাখিয়া যান, যাহাতে তাহাদিগকে ভক্তিভারে স্মরণ করিলে জীবন মহত্বের পথে আকৃষ্ট হয়, কিন্তু ক্ষমতাশালীকে স্মরণ করিয়া আমরা যে ক্ষমতাপ্ৰাপ্ত হইতে পারি, তাহা নহে। ভক্তিভাবে শেকসপিয়রের স্মরণমাত্র আমাদিগকে শেকসপিয়রের গুণের অধিকারী করে না, কিন্তু যথার্থভাবে কোন সাধুকে অথবা বীরকে স্মরণ করিলে আমাদের পক্ষে সাধুত্ব বা বীরত্ব কিয়াৎপরিমাণেও সরল হইয়া আসে। তবে গুণিসম্বন্ধে আমাদের কি কৰ্ত্তব্য ? গুণীকে তাহার গুণের দ্বারা স্মরণ করাই আমাদের স্বাভাবিক কৰ্ত্তব্য । শ্রদ্ধার সহিত তানসেনের গানের চর্চা করিয়াই গুণমুগ্ধ গায়কগণ তানসেনকে যথার্থভাবে স্মরণ করে । ধ্রুপদ শুনিলে যাহার গায়ে জর আসে, সে-ও তানসেনের প্ৰতিমা গড়িবার জন্য চান্দা দিয়া ঐহিক-পারিত্রিক কোন ফললাভ করে, এ কথা মনে করিতে পারি না । সকলকেই যে গানে ওস্তাদ হইতে হইবে, এমন কোন অবশ্য বাধ্যতা নাই। কিন্তু সাধুতা বা বীরত্ব সকলেরই পক্ষে আদর্শ। সাধুদিগের এবং মহৎকৰ্ম্মে প্ৰাণবিসর্জনপর বীরদিগের স্মৃতি সকলেরই পক্ষে মঙ্গলকর । কিন্তু দল বাধিয়া ঋণশোধ করাকে