পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bም চারিত্রিপূজা আমাদের দেশে সর্বদাই শুনিতে পাই। দয়ার সহিত বীৰ্য্যের সম্মিলন না হইলে সে দয়া অনেকস্থলেই অকিঞ্চিৎকর হইয়া থাকে। কেবল যে সঙ্কট এবং অধ্যবসায়ের ক্ষেত্রে আমাদের অন্তঃপুরচারিণী দয়া প্ৰবেশ করিতে চাহে না, তাহা নহে। সামাজিক কৃত্রিম শুচিতারক্ষার নিয়মলঙ্ঘনও তাহার পক্ষে দুঃসাধ্য। আমি জানি, কোনো এক গ্ৰাম্য মেলায় এক বিদেশী ব্ৰাহ্মণের মৃত্যু হইলে ঘৃণা করিয়া কেহই তাহার অন্ত্যেষ্টিসৎকারের ব্যবস্থা করে নাই, অবশেষে তাহার অনুপস্থিত আত্মীয়পরিজনের অন্তরে চিরশোকশল্য নিহিত করিয়া ডোমের দ্বারা মৃতদেহ শ্মশানে শৃগালকুকুরের মুখে ফেলিয়া আসা হয়। আমরা অতি সহজেই “আহা উহু’ এবং অশ্রুপাত করিতে পারি, কিন্তু কৰ্ম্মক্ষেত্রে পরোপিকারের পথে আমরা সহস্ৰ স্বাভাবিক এবং কৃত্ৰিম বাধার দ্বারা পদে পদে প্ৰতিহত। বিদ্যাসাগরের কারুণ্য বলিষ্ঠ,-পুরুষোচিত ; এইজন্য তাহ। সরল এবং নিৰ্ব্বিকার ; তাহা কোথাও সূক্ষ্মতর্ক তুলিত না, নাসিকাকুঞ্চন করিত না, বসন তুলিয়া ধরিত না ; একেবারে দ্রুতপদে, ঋজুরেখায়, নিঃশঙ্কে, নিঃসঙ্কোচে আপন কাৰ্য্যে গিয়া প্ৰবৃত্ত হইত। রোগের বীভৎস মলিনতা আঁহাকে কখন রোগীর নিকট হইতে দূরে রাখে নাই। এমন কি, ( চণ্ডীচরণবাবুর গ্রন্থে লিখিত আছে) কৰ্ম্মাটাড়ে এক মেথরজাতীয়া স্ত্রীলোক ওলাউঠায় আক্রান্ত হইলে বিদ্যাসাগর স্বয়ং তাহার কুটীরে উপস্থিত থাকিয়া স্বহস্তে তাহার সেবা করিতে কুষ্ঠিত হন নাই। বৰ্দ্ধমানবাসকালে তিনি তঁাহার প্রতিবেশী দরিদ্র মুসলমানগণকে আত্মীয়নির্বিশেষে যত্ন করিয়াছিলেন। শ্ৰীযুক্ত শম্ভুচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ব মহাশয় তাহার সহোদরের জীবনচরিতে লিখিতেছেন-“অন্নািচ্ছত্ৰে ভোজনকারিণী স্ত্রীলোকদের মস্তকের কেশগুলি তৈলাভাবে বিরূপ দেখাইত। অগ্ৰজমহাশয় তাহ অবলোকন করিয়া দুঃখিত হইয়া তৈলের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। প্ৰত্যেককে দুইপলা করিয়া তৈল দেওয়া হইত। যাহারা