পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা ܗ ও প্ৰেয়ের পথ উদঘাটিত হইয়াছিল। তখন সৰ্বস্ব হারাইবার সম্ভাবনা তাহার সম্মুখে ছিল—তাহার স্ত্রীপুত্র ছিল, তাহার মানসন্ত্রম ছিল, তৎসত্ত্বে যেদিন তিনি শ্রেয়ের পথ নির্বাচন করিয়া লইলেন, সেই মহাদিনের কথা আজ যেন আমরা একবার স্মরণ করিবার চেষ্টা করি, তাহ। হইলে আমাদের বিষয়লালসার তীব্ৰতা শান্ত হইয়া আসিবে এবং সন্তোষের অমৃতে আমাদের হৃদয় অভিষিক্ত হইবে । অর্জনের দ্বারা তিনি যাহা আমাদিগকে দিয়াছেন, তাহা আমরা গ্ৰহণ করিয়াছি ; বর্জনের দ্বারা তিনি যাহা আমাদিগকে দিয়াছেন, তাহাও যেন গৌরবের সহিত গ্ৰহণ করিবৃার যোগ্য আমরা হইতে পারি। তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থ ছিলেন,-কিন্তু তিনি যদি শুদ্ধমাত্ৰ বিষয়ী হইতেন, তবে তাহার উদ্ধারপ্রাপ্ত সম্পত্তিখণ্ডকে উত্তরোত্তর সঞ্চায়ের দ্বারা বহুলারূপে বিস্তৃত করিতে পারিতেন । কিন্তু বিষয়বিস্তারের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া ঈশ্বরের সেবাকে তিনি বঞ্চিত করেন নাই । তাহার ভাণ্ডার ধৰ্ম্মপ্রচারের জন্য মুক্ত ছিল—কতো অনাথ পরিবারের তিনি আশ্রয় ছিলেন, কতো দরিদ্র গুণীকে তিনি অভাবের পেষণ হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, দেশের কতো হিতকৰ্ম্মে তিনি বিনা আড়ম্বরে গোপনে সাহায্য দিয়াছেন । এইদিকে কৃপণতা করিয়া তিনি কোনোদিন তাহার সন্তানদিগকে বিলাসভোগ বা ধনাভিমানচর্চায় প্রশ্ৰয় দেন নাই ;-ধৰ্ম্মপরায়ণ। গৃহস্থ যেমন সমস্ত অতিথিবর্গের আহারশেষে নিজে ভোজন করেন, তিনি সেইরূপ তাহার ভাণ্ডারদ্বারের সমস্ত অতিথিবগের পরিবেষণাশেষ লইয়া নিজের পরিবারকে প্ৰতিপালন করিয়াছেন । এইরূপে তিনি আমাদিগকে ধনসম্পদের মধ্যে রাখিয়াও আড়ম্বর ও ভোগোন্মত্ততার হস্ত হইতে রক্ষা করিয়াছেন, এবং এইরূপে যদি তাহার সন্তানগণের সম্মুখ হইতে লক্ষ্মীর স্বর্ণপিঞ্জরের অবরোধদ্বার কিছুমাত্র শিথিল হইয়া থাকে, যদি তাহারা ভাবলোকের মুক্ত-আকাশে অবাধবিহারের কিছুমাত্র