পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১০৭

গেল। সেই সংকটের মধ্যেও পিতৃদেব অবিচলিত– বৃক্ষ ইব স্তব্ধঃ। তখন তিনি মন্ত্র গ্রহণ করেছেন; হয়তাে তখনই সম্যক্ উপলব্ধি করতে পারলেন উপনিষদ যে মহৎ বাণী প্রচার করে গেছেন– ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।

 আমার অভিজ্ঞতার মধ্যেই দেখেছি, অনেক শােকাবহ ব্যাপারে, আত্মীয়স্বজনের বিয়ােগবিচ্ছেদে, তিনি তাঁর সেই তেতলার ঘরে আত্মসমাহিত হয়ে একা বসে আছেন। কেউ সাহস করত না তাঁকে সান্ত্বনা দিতে। বাইরের আনুকূল্যের তিনি কোনােদিন অপেক্ষা রাখেন নি, আপনি আপনার মধ্যে আনন্দ পেতেন।

 আমার যখন উপনয়ন হল, দশ বছর বয়সে— মুণ্ডিত কেশ, তার জন্য একটু লজ্জিত ছিলেম– তিনি হঠাৎ আমায় ডেকে বললেন, “হিমালযে যেতে ইচ্ছে কর?” আমার তখনকার কী আনন্দ বালবার ভাষা নেই। সেকালে লুপ-লাইনটাই ছিল মেন-লাইন– রাস্তায় আমাদের প্রথম বিরামের জায়গা হল শান্তিনিকেতন। সে জায়গার সঙ্গে এখনকার এ জায়গার অনেক তফাত– ধূ ধূ করছে প্রান্তর, শ্যামল বৃক্ষছায়ার অবকাশ নেই প্রায় কোথাও। সেই উষর রুক্ষ প্রান্তরের মধ্যে, আজকাল যেটা অতিথিশালা তারই একটা ছোটো ঘরে, আমি থাকতুম, অন্যটাতে তিনি থাকতেন। তাঁর রােপণ-করা শালবীথিকা তখন বড়াে হতে আরম্ভ করেছে। তখন আমার কবিতা লেখার পাগলামাে তার আদিপর্ব পেরিয়েছে, নাট্যঘরের পাশে একটা নারিকেলগাছ ছিল, তারই তলায় বসে ‘পৃথীরাজবিজয়’[১] নামে একটি কবিতা রচনা করে গর্ব অনুভব করেছিলাম। খােয়াইয়ে বেড়াতে গিয়ে নানা রকমের বিচিত্র মুড়ি সংগ্রহ করা, আর এ ধারে ও ধারে ঘুরে গুহাগহ্বর গাছপালা আবিষ্কার করাই ছিল আমার কাজ।

  1. ‘পৃথ্বীরাজের পরাজয়?’ অষ্টব্য জীবনস্মৃতি ‘হিমালয়যাত্রা’