পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতপথিক রামমোহন রায়
৬৭

অত্যন্ত পৃথক করে জানা হয় পৃথিবীতে এমন আর কোন দেশেই নেই। সুতরাং এ কথা বলতে হবে ভারতবর্ষে এমন একটা বাহ্যস্থূলতা রয়ে গেছে, যা ভারতবর্ষের অন্তরতর সত্যের বিরুদ্ধ, যার মর্মান্তিক আঘাত দীর্ঘকাল ধরে ভারতের ইতিহাসে প্রকাশ পাচ্ছে নানা দুঃখে দারিদ্র্যে অপমানে।

 এই দ্বন্দ্বের মাঝখানে ভারতবর্ষের শাশ্বত বাণীকে জয়যুক্ত করতে কালে কালে যে মহাপুরুষেরা এসেছেন, বর্তমান যুগে রামমোহন রায় তাঁদেরই অগ্রণী। এর আগেও নিবিড়তম অন্ধকারের মধ্যে মাঝে মাঝে শোনা গিয়েছে ঐক্যবাণী। মধ্যযুগে অচল সংস্কারের পিঞ্জরদ্বার খুলে বেরিয়ে পড়েছেন প্রত্যুষের অতন্দ্রিত পাখি, গেয়েছেন তাঁরা আলোকের অভিনন্দন-গান সামাজিক জড়ত্বপুঞ্জের উর্ধ্ব আকাশে। তাঁরা সেই মুক্ত প্রাণের বার্তা এনেছেন, উপনিষদ যাকে সম্বোধন করে বলেছেন ‘ব্রাত্যস্ত্বং প্রাণ’— হে প্রাণ, তুমি ব্রাত্য, তুমি সংস্কারে বিজড়িত স্থাবর নও। সেই মুক্তিদূতের মধ্যে একজন ছিলেন কবীর, তিনি নিজেকে ভারতপথিক ব’লে জানিয়েছেন। নানা জটিল জঙ্গলের মধ্যে এই ভারতপথকে যাঁরা দেখতে পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আর-একজন ছিলেন দাদূ। তিনি বলেন

ভাইরে ঐসা পথ হমার
দ্বৈপখরহিত পংখ গহি পুরা অবরণ এক অধরা।
ভাই রে, আমার পথ এই রকম, সে দুইপক্ষরহিত, বর্ণহীন, সে এক।

 তিনি বলেছেন—

জাকৌঁ মারণ জাইয়ে সোঈ ফিরি মারৈ,
জাকৌঁ তারণ জইয়ে সোঈ ফিরি তারৈ।

যাকে আমরা মারি সেই আমাদের ফিরে মারে, যাকে ত্রাণ করি সেই আমাদের ফিরে ত্রাণ করে।