পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এখানকার সবচেয়ে যিনি বিখ্যাত ডাক্তার তিনি আমাকে ভাজায়মান (?) কই মাছের মত উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ঠুকে টিপে পরীক্ষা করলেন, ঘড়ি বের করে নাড়ীর পদক্ষেপ গণনা করে দেখলেন— শেষকালে গম্ভীর মুখে বললেন দেহযন্ত্র বিকল হয় নি কিন্তু দুৰ্ব্বল হয়েচে অতএব এখন কিছুদিন একে সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া কৰ্ত্তব্য। তাছাড়া ওটাকে তাজা করে তোলবার জন্যে কিছু ওষুধও চাই। ডাক্তারের পরামর্শমত এখানকার একজন ধনী মহিলা সহরের থেকে দূরে একজায়গায় নদীর ধারে আমাদের জন্যে একটি বাগান বাড়ি খালি করে দিলেন। এদিকে পেরু বলে পাঠালে, আচ্ছা ভাল, আমাদের উৎসবের দিনে নাই বা এলেন, বিশ্রাম করে শরীর সুস্থ করে নিয়ে তার পরে আসতে দোষ কি ? খুব কষে কিছুদিন বিশ্রাম করে নিয়ে আবার ডাক্তারকে ডেকে পাঠানো গেল— আবার এই দেহটার এ পিঠে ও পিঠে ঠোকাঠুকি, টেপাটুপি— আবার সেই পরামর্শ, আগুেস পাহাড় লঙ্ঘন করবার মত আমার যোগ্যতা নেই। দক্ষিণ আমেরিকার অন্তরীপ বেষ্টন করে সমুদ্রপথে যাবার প্রস্তাব করা গেল— ডাক্তার বলে, দক্ষিণ সমুদ্রে এত অত্যন্ত বেশি শীত যে ঠাণ্ডায় আমার হৃৎপিণ্ড একেবারে পিণ্ড পাকিয়ে যাবে। অর্থাৎ পাহাড় পেরোতে গেলে হাপিয়ে মরব আর সমুদ্র পেরোতে গেলে কাপুনি ধরিয়ে মারবে। দুটোর মধ্যে কোনোটাই স্পৃহনীয় নয়। অতএব পলায়ন ছাড়া গতি নেই। জাহাজের সংবাদ নিয়ে জানা গেল, পর বৎসরে তৃতীয় জানুয়ারিতে আটলাণ্টিক পাড়ি দেবার জাহাজ পাওয়া যাবে। আমার বিশ্বাস এর মধ্যে কিছু ষড়যন্ত্র ছিল। জাহাজ শীঘ্র পাওয়া গেলে আমাকে ধরে রাখবার মতলব ব্যর্থ হত। আমার বন্ধু এলমহসীও নানা কারণে বিলম্ব করার পক্ষপাতী। অতএব সুদীর্ঘকাল বিনা প্রয়োজনে আমি বন্দী হয়ে রইলুম। পাখীর খাঁচা যদি খুব করে ঢাকা দেওয়া যায়, তাহলে অবিরাম গান গেয়ে সে আত্মবিনোদন করে। আমিও প্রতিদিন পায়ের শিকল নাড়া দিয়ে সেই তালে কবিতা লিখতে লাগলুম। ఇbbr