পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদারায় হেলান দিয়ে কখনো ঘুমোই কখনো জাগি। আশ্রমের কুটীরে কুটীরে সব আলোগুলিই নিবে যায়, চারিদিক নিস্তব্ধ— আকাশে যেন শাস্তনিঃ শ্বাস শিবের তপস্যা ; নন্দী যেন অবারিত প্রান্তরের প্রান্তে দাড়িয়ে আছে ঠোটের উপরে তর্জনী তুলে। রাত একটা হয় কি দুটো হয় জানতে পারিনে— শোবার ঘরে উঠে গিয়ে মশারির মধ্যে প্রবেশ করি। দিনরাত্রির মধ্যে সেই আমার প্রথম বন্ধনদশা, তার পরে ভোরের আলোর কাছ থেকে আবার মুক্তির আহবান আসে। তোকে ত আগেকার চিঠিতেই লিখেচি আমি আবার যেন আমার (ছেলে] বেলাকার যুগে এসে পৌঁচেছি, নিখিল তার আঁচলের মধ্যে আমাকে ঘিরে নিয়েচে । [তাjর নিশ্বাস আমার নগ্ন চিত্তের উপর এসে লাগচে। সত্তার সহজ স্রোতে গা-ভাসান দিয়ে চলেচি। বাইরের আকাশ পূর্ণ করে একটি বাণী আছে– “এই যে আমি”— সেই বাণী [...]" হয়ে উঠেচে; আমার মধ্যেও তারি সঙ্গে মেলে এমন একটি বাণী আছে, সেও হচ্চে— “এই যে আমি”— সেই বাণীই বিশ্বসত্তার সঙ্গে মিলে আজ আর-সব কথা ছাড়িয়ে উঠচে। এতদিন ছিল নানা প্রয়াস, [নানা] কাজ ; অর্থাৎ তখন করাটাই আমার হওয়াকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল। এখন সে সমস্ত সরে যেতে আমি যে হয়ে আছি এই সত্যটাই নিখিল-হওয়ার সত্যের মধ্যে ডুব দিয়েচে । [মে] মাসে য়ুরোপে যাওয়া ঠিক করেচি। মনের মধ্যে বারবার আশঙ্কা হচ্চে পাছে [...]র আমি ঢাকা পড়ি। কিন্তু আমার বিধাতা আমার জীবনপ্রবাহিণীকে পদ্মার চরে সৃষ্টি করেচেন। এর এক কূলে অনাবৃত নির্জন চর, আর এক কুলে ছায়ালোকে [...] সজন লোকালয়। হওয়া এক কুলে গান ধরেচে, করা আর এক কূলে মৃদঙ্গে{তাল] দিচ্চে। শেষ পর্যন্ত কোনোটাকেই বাদ দেবার হকুম নেই। সেইজন্যেই আমার জীবন [...] ত কঠিন— সুর মেলাতে গিয়ে তাল কাটলে নিষ্কৃতি নেই। ইতি ১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩২ ভানুদাদা