পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে তুমি ভাবই কর আর আড়িই কর আমি মানুষটা যা তা তোমাকে পুরোপুরি চিনে নিতে হবে। এটুকু জেনো আমার মধ্যে একটা জায়গা আছে যেখানটা খুবই গম্ভীর— তাকে যদি তোমার পছন্দ না হয় তা হলে আমি যেখানে সত্য সেখানে তুমি আমাকে জানতেই পারবেনা, আমি যে কেবল মাত্র ভাল করে চুল আঁচড়িয়ে লাল কাপড় পরিয়ে, তিন বাটি দুধ খাইয়ে, সকাল সকাল ঘুম পাড়িয়ে দেবার মানুষ, তা ঠিক নয়। তা যদি হত তাহলে বৌমা আমাকে এতদিনে সাজিয়ে গুজিয়ে তার ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে হাওয়া খাইয়ে বেড়াতেন। কিন্তু বৌমা যে তা করেন না তার একটি মাত্র কারণ, তিনি আমাকে কেবল বাইরের দিক থেকে দেখেন নি— তিনি জানেন আমার মধ্যে একটি গম্ভীর মানুষ আছে। আমাকে আমার যে ঠাকুর এই পৃথিবীতে পাঠিয়েচেন— আমি তাকে অস্তরের সঙ্গে মানি, সব চেয়ে বড় বলে মানি— আমি জানি তিনি আমাকে তারই কাজের ভার দিয়ে পাঠিয়েচেন— আমার সমস্ত হাসি ঠাট্টা গল্প গান সুখ দুঃখের মধ্যে এই কথাটি আমি ভুলি নে। যখনি ভুলি তখনি ছোট হয়ে যাই, তখনি দুঃখ পাই। তাকে প্রণাম করে তার হাত থেকে আমি আমার জীবনের সমত্ত দান গ্রহণ করতে চাই। আমি যে এখানে শিশুদের সেবা করি, তার কারণ, এদের সেবা করে আমি আমার ঠাকুরের যথার্থ পূজো করতে পারি— নইলে শুধু মন্ত্র পড়ে পূজো হয় না। এই যে আমার ঠাকুরঘরের আমি, এই যে পূজারি আমি, এই আমিই সত্য আমি। আমার এই ভিতরকার আমির সঙ্গে সংসারে যাদের সম্বন্ধ না হয় তারা আমার যত আত্মীয় হোক সে সম্বন্ধ সত্য হয় না— সেই জন্যে সে সম্বন্ধ দুদিনেই ভেঙ্গে যায়। তুমি ছেলেমানুষ, তুমি আমার এই দিকের কথা হয় ত সম্পূর্ণ বুঝবে না, কিন্তু যখন তুমি আমার এত কাছে এসেছ তখন এই কথাটিকে তোমার বুঝতে চেষ্টা করতে হবে— নইলে আমাকে নিয়ে কেবল দুঃখ পেতে থাকবে। আমি তোমাকে অস্তরের সঙ্গে স্নেহ করি, সেই স্নেহ যদি وان (يا