পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঠে বনে পাগলা হাওয়ার দৌরাত্মা চলছিল— আজ সকালে তার কোনো চিহ্ন নেই। আজ শরৎকালের প্রসন্নমূৰ্ত্তি প্রকাশ পেয়েছে— শিবের জটা ছাপিয়ে যেমন গঙ্গা ঝরে পড়চে, আকাশ তেমনি আজ আলোকের নিৰ্ম্মল ধারা ঢেলে দিয়েচে— পৃথিবী আজ যেন মাথা নত করে তার অশ্রু-আর্দ্র হৃদয়খানি মেলে দিয়েচে, আর আকাশের কেন তরুণ দেবতা হাসিমুখে তার উপরে এসে দাঁড়িয়েচেন— জলস্থল শূন্যতল আজ একটি জ্যোতিৰ্ম্ময় মহিমায় পূর্ণ হয়ে উঠেচে। সেই পরিপূর্ণতায় চারিদিক শাস্ত ভন্ধ। অথচ গোলমাল যে কিছু নেই তা নয়— জাগ্রত প্রভাতের কাজকৰ্ম্মের কলধ্বনি উঠেচে— আমার ঠিক সামনেই দিনুবাবুর ঘরের দোতলায় রাজমিস্ত্রি এবং মজুরের দলে নানা রকম ডাক হাক এবং ঠকঠাক লাগিয়ে দিয়েচে, দূরে থেকে ছেলেদের কণ্ঠস্বরও শোনা যাচ্চে, পূব দিকের সদর রাস্তা দিয়ে সার-বাধা গোরুর গাড়ি ইটের বোঝা নিয়ে আসচে তারই অনিচ্ছুক চাকার আত্তনাদ এবং গাড়োয়ানের তজ্জনধ্বনির বিরাম নেই, তার উপরে, ঠিক আমার পিছনের জানলার বাইরে সুধাকান্তর ঘরের চালের উপরে বসে একদল চড়ুই পাখী কিচিমিচি কিচিমিচি করে কি যে বিষম তর্ক বাধিয়ে দিয়েচে তার এক বর্ণ বোঝবার জো নেই,— প্রায় ন্যায় শাস্ত্রেরই তর্কের মত। কিন্তু তবু আজ আলোকে অভিষিক্ত আকাশের এই অন্তরতর ভন্ধতা কিছুতেই যেন ভাঙতে পারচে না— গায়ের উপর দিয়ে হাজার হাজার যে সব ঝরনা ঝরে পড়চে তাতে যেমন হিমালয়ের অভ্ৰভেদী স্তব্ধতাকে বিচলিত করে না এও ঠিক সেই রকম— একটি তপঃপ্রদীপ্ত অপরিমেয় মেীনকে বেষ্টন করে এই সমস্ত ছোট ছোট শব্দের দল খেলা করে চলেচে— তাতে তপস্যার গভীরতা আরো বড় হয়ে প্রকাশ পাচ্চে, নষ্ট হচ্চে না। শরতের বনতল যেমন নিঃশব্দে ঝরে পড়া শিউলি ফুলে আকীর্ণ হয়ে ওঠে, তেমনি করেই আমার মনের মধ্যে আজ শরৎ আকাশের এই আলো শুত্র শাস্তি বর্ষণ করচে। “ላ8