পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ー)8 [২ অক্টোবর ১৯১৮]* [শাস্তিনিকেতন] কল্যাণীয়াসু, রাণু, আচ্ছা বেশ, রাজি । ভানুদাদা নামই বহাল হল। এ নামে আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ ডাকে নি। আর-কেউ যদি ডাকে তবে তার উত্তর দেব না। সিণ্ডারেলার গল্প জান ত? তার এক পাটি জুতো নিয়ে রাজার ছেলে পা মেপে বেড়াতে লাগল। আমার ভানু নামটা সেইরকম যদি কেউ ব্যবহার করতে যায় আমি তখনি বলতে পারব— আচ্ছ আগে নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে দেখ— যার নাম সুরবালা, সে বলবে সুরো সুরু সুরি কিছুতেই ভানুর সঙ্গে মিলবে না, যার নাম মাতঙ্গিনী সে বলবে মাতু মাতি মাতো কিছুতেই মিলবে না, তিনকড়িরও সেই দশা, কাত্যায়নীরও তাই; জগদম্বা, পীতাম্বরী, গুরুদাসী, শঙ্কেশ্বরী, খগেন্দ্রমোহিনী, কারোই কাছে ঘেঁষবার জো নেই। ভারী সুবিধে হয়েচে। কেবল আমার মনে ভারি ভয় রয়ে গেল, পাছে কারো নাম থাকে “কানু বিলাসিনী।” তবে তাকে কি বলে ঠেকাব ? তুমি ভেবে রেখে দিয়ো। ছুটির দিন এল— পশু ছুটি। তার পরে কি করব? তখন কেবল শিউলি বন, শিশির ভেজা ঘাস, আর দিগন্ত প্রসারিত মাঠ আমার মুখ তাকিয়ে থাকবে— তারা ত আমার কাছে ইংরেজি শিখতে চায় না— তারা চায় আমার মনের মধ্যে যে আনন্দের সোনার কাঠি আছে সেইটে ছুইয়ে দিয়ে তাদের জাগিয়ে তুলব এবং আমার চেতনার সঙ্গে তাদের সৌন্দৰ্য্যকে মিলিয়ে নেব। আমার জাগরণের ছোয়াচ না লাগলে পরে প্রকৃতি জাগবে কি করে ? নীলাকাশের কিরণ কমলের উপরে শারদলক্ষ্মী আসন গ্রহণ করেন— কিন্তু আমার চোখের আনন্দ দৃষ্টি না পড়লে পরে সে পদ্মই ফোটে না। Ե Տ