পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রীহরি শরণং

৮।১।৯৬
কুমিল্লা

শ্রদ্ধাভাজনেষু,

 বহুদিনের ইচ্ছা ছিল, আপনার নিকট একখানা পত্র লিখি; যেদিন “সাধনা আর বাহির হইবে না” এই দুঃখকর সংবাদ পড়িলাম, সেই দিন পত্র লিখিতে বড় ইচ্ছা হইয়াছিল— কিন্তু লিখি নাই; মনের নিভৃতে যে পূজা দিবার প্রবৃত্তি হয়, সাধক তাহা গোপন করেন, আমিও আপনার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির কথা লিখিতে কুণ্ঠিত ছিলাম। কিন্তু সাধনার লোপে মনে যে একটী অভাব হইয়াছে, তাহা পূরণ হইতেছে না, বাড়ীর চিঠির আশায় যেরূপ প্রীতিকম্পিত উৎকণ্ঠাপূর্ণ হৃদয়ে ডাকঘরের প্রতি চাহিয়া থাকিতাম, সাধনার জন্যও কতকটা সেই ভাবের আগ্রহ জন্মিয়াছিল। শুনিয়াছি সারসপক্ষীর মৃত্যুকালের সংগীতটিই মধুরতম হয় সাধনারও শেষ “বিদ্যাসাগর”-কথা বড়ই মিষ্ট হইয়াছিল; উন্নত চরিত্রকে উন্নত মনে ধারণা করিবার শক্তি বাঙ্গলা সমালোচনায় সেই প্রথম পড়িয়াছিলাম; আলো ও ছায়ার যথাযথ সম্পাতে উজ্জ্বল করিয়া বিশাল শাল্মলীতরুর ন্যায় ছবিখানিকে ফুলপল্লবের ফ্রেমে বাঁধিয়া দেখাইবার পরিণত কৌশল, সেই প্রবন্ধে ঠিক চিত্রকরের তুলির যোগ্যই হইয়াছিল।

 পূর্ণ লীলা দেখাইতে দেখাইতে সাধনার অবসান হইল; ক্রমে মন্দীভূত তেজে যাহা নিবিয়া যায়, তাহার শেষ দেখিতে মন অলক্ষিত ভাবে প্রস্তুত হয়; সাধনার শেষ দেখিতে আমরা সেরূপ প্রস্তুত হইতে

৫৩