পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮ নং শ্যামপুকুর ষ্ট্রীট
কলিকাতা
২৬শে আগষ্ট ১৯০০

পরম শ্রদ্ধাস্পদেষু

 বহুদিন হয় মহাশয়ের অপূর্ব্ব গীতিকাব্য ক্ষণিকা উপহার পাইয়া সম্মানিত হইয়াছি কিন্তু নিতান্ত পীড়িত থাকায় এ পর্যন্ত ক্ষণিকার দৈব প্রতিভাশালী কবির প্রতি চিত্তের ঐকান্তিক অনুরাগ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিবার আনন্দ লাভ করিতে পারি নাই। আমার স্নায়ব দুর্ব্বলতা এতদুর বৃদ্ধি পাইয়াছে যে একখানি সামান্য পত্র লিখিলেও অবসন্ন হইয়া পড়ি।

 ক্ষণিকা সামাজিক হিসাবে একটুকু উচ্ছৃঙ্খল এবং বোধ হয় তজ্জন্যই উহা বিশেষরূপ উপাদেয় হইয়াছে। আমাদের মায়াবাদী সমাজ, রূপ মিথ্যা, জীবন মিথ্যা, যৌবন মিথ্যা প্রভৃতি সংস্কারাধীন হইয়া বাগ্দেবীর প্রবেশ একরূপ রোধ করিয়া রাখিয়াছি বলিলে অত্যুক্তি হয় না। যে স্থানে সংসারের সকলই মিথ্যা, সেখানে কবি কোন্ সৌন্দর্য্য উপভোগ করিবেন! আপনার দৈব কবিত্ব পৃথিবীর প্রতি সৌন্দর্য্যটুকুর আস্বাদ অঙ্গীকার করিয়া এই তত্ত্বকণ্টকসংকুল সংসারকে ক্ষণেকের জন্য আবাস যোগ্য করিয়া তুলিয়াছে। কবির সুখের হাস্যে আমাদের ‘নশ্বর’ ‘অসার’ সংসার মুখরিত হইয়া নবশ্রী লাভ করিয়াছে এবং মায়াবাদ যেন আপনা হইতে লজ্জিত হইয়া পড়িয়াছে। কবির উচ্ছৃঙ্খলতায় নব জীবনের আনন্দ সূচিত হইয়াছে এবং উষর দুঃখময় ক্ষেত্রে গঙ্গাধারার ন্যায় একটি পুণ্য প্রবাহ সঞ্চারিত করিয়াছে। কবি অশ্লেষাতে যাত্রা করিয়া অসময়ে অপথে চলিয়াছেন, শপথ করিয়া বিপথ ব্রত গ্রহণ করিয়াছেন, মাতাল হইয়া গান গাহিয়াছেন, শুষ্ক ঋষির চিত্তে ও জ্যামিতির সূত্রে সত্যের আলয়

৫৯