পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে দেবতা স্বর্গের তার মধ্যে এসব কিছুই সত্য নয়। ফ্লোরেন্স, নাইটিঙ্গেল যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের শুশ্রুষা করেচেন, সেইখানে নারীর পূজা সত্য হয়েচে । মানুষের মধ্যে যে দেবতা ক্ষুধিত তৃষিত রোগাৰ্ত্ত শোকাতুর, র্তার জন্তে মহাপুরুষেরা সৰ্ব্বস্ব দেন, প্রাণ নিবেদন করেন, সেবাকে ভাববিলাসিতায় সমাপ্ত নী করে তাকে বুদ্ধিতে বীৰ্য্যে ত্যাগে মহৎ করে তোলেন। তোমার লেখায় তোমাদের পূজার বর্ণনা শুনে আমার মনে হয় এ সমস্তই অবরুদ্ধ অতৃপ্ত অসম্পূর্ণ জীবনের আত্মবিড়ম্বনা । আমার মানুষরূপী ভগবানের পূজাকে এত সহজ করে তুলে তাকে যারা প্রত্যহ বঞ্চিত করে তারা প্রত্যহ নিজে বঞ্চিত হয়। তাদের দেশের মানুষ একান্ত উপেক্ষিত, সেই উপেক্ষিত মানুষের দৈন্ত্যে ও তুঃখে সে দেশ ভারাক্রান্ত হয়ে পুথিবীতে সকল দেশের পিছনে পড়ে আছে । এ সব কথা বলে’ তোমাকে ব্যথা দিতে আমার সহজে ইচ্ছা করে না— কিন্তু যেখানে মন্দিরের দেবতা মানুষের দেবতার প্রতিদ্বন্দ্বী, যেখানে দেবতার নামে মানুষ প্রবঞ্চিত সেখানে আমার মন ধৈর্য্য মানে না । গয়াতে যখন বেড়াতে গিয়েছিলেম তখন পশ্চিমের কোন এক পূজামুগ্ধ রানী পাণ্ডার পা মোহরে ঢেকে দিয়েছিলেন – ক্ষুধিত মানুষের অন্নের থালি থেকে কেড়ে নেওয়া অন্নের মূল্যে এই মোহর তৈরি । দেশের লোকের শিক্ষার জন্যে অন্নের জন্যে, আরোগ্যের জন্যে এরা কিছু দিতে জানে না, অথচ নিজের অর্থ-সামর্থ্য সময় প্রতি ভক্তি সমস্ত দিচ্চে সেই বেদীমূলে যেখানে তা নিরর্থক হয়ে যাচ্চে । মানুষের প্রতি মানুষের এত নিরোৎসুক্য, এত ঔদাসীন্য অন্য কোনো দেশেই নেই, এর প্রধান כ\ 8