পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসতুম। তাই বার বার শুনতে শুনতে বইটার একটি মেয়ের নাম কী করে যে মনের মধ্যে গাথা থেকে গেছে খুবই আশ্চর্য লাগে। আমার তখন ইস্টলিনের রোমান্সে আকৃষ্ট হবার বয়স নয়। তবু বোধ হয়, মার গল্প বলার ধরনে ও তার কণ্ঠস্বরে যে বেদনা ফুটে উঠত তাতে আমার শিশুমনে একটা ছাপ রেখে গিয়েছিল । তাই বারবার নামটা মনে রয়ে গেল । কিছুদিন পরে মার অসুখ করলে তাকে কলকাতায় আনা হল । এখন যেটাকে বিচিত্রা বলা হয়, আমরা ঐখানে থাকতুম । তখন আমরা ঐ বাড়িকে হয় লালবাড়ি নয় নতুন বাড়ি বলতুম। লালবাড়ির ঘরের একটু বিশেষত্ব ছিল । এক ধারে দেয়াল অবধি মস্ত বড়ো অালমারি প্রায় ছাতসমান উচু। আলমারির কাচের পাল্লায় টুকটুকে লাল রঙের শালু আঁটা । আর-এক ধারে একটু ফাক ছিল, সেখানে পাতলা কাঠের দরজা, তার মাথার উপর এবং নীচের দিকে ফঁাকা । অনেক সময় রেস্তোরায় এরকম দরজা দেখা যায়। হাত দিয়ে ঠেলা দিলে খুলে গিয়ে তখনি আবার বন্ধ হয়ে যেত । একটা বড়ো ঘরকে এইভাবে তিন ভাগে বিভক্ত করে তিনটি ঘরে পরিণত করা হয়েছিল। একটা ঘরে আমরা থাকতুম। সব চেয়ে শেষের পশ্চিমের ঘরে মাকে রাখা হল নিরিবিলি হবে বলে । আমাদের বাড়ির সামনে গগনদাদাদের বিরাট অট্টালিকা থাকাতে নতুন বাড়ির কোনো ঘরে হাওয়া খেলত না । সে বাড়িতে তখন বৈদ্যুতিক পাখা ছিল না, তাই একমাত্র তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করা ছাড়া গতি ছিল না। ঐ বাতাসহীন ঘরে অসুস্থ শরীরে মা না জানি কত কষ্ট পেয়েছেন । কিন্তু বড়োবউঠান হেমলতা দেবীর কাছে শুনেছি যে বাবা মার পাশে বসে সারা রাত তালপাখা নিয়ে বাতাস করতেন । “স্মৃতিকথা’, ১৩৯৩, পৃ. ১৬-১৮ وی) و ) (ه