দেখি,—সব গাড়োয়ানই উত্তর-পশ্চিম দেশের মুসলমান। রাস্তায় দেখি, যত পাহারাওলা সবই শিখজাতীয়; কেহই মগজাতীয় নহে। দুই ধারের দোকানে দেখি, সব দোকানদারই হয় সুরাটী মুসলমান, নয় ইহুদী, নয় পাৰ্শী, নয় চীনে, নয় সাহেব, বর্ম্মান এক জনও নহে। বাজারের ভিতরে ঢুকিয়া দেখি, ব্রহ্মদেশীয় স্ত্রীলোকগণ ছোট ছোট দোকানে বসিয়া নানা রঙের লুঙ্গী পরিয়া ও মুখে ঘন করিয়া “তা-না-খা” অর্থাৎ চন্দনকাঠের গুঁড়া মাখিয়া সুস্থ শরীরে হৃষ্টচিত্তে কেনা বেচা করিতেছে।
এই সকল দেখিয়া আমার বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না। সবইত দেখিলাম ভিন্ন দেশীয় লোক-চাটগাঁয়ের লস্কর, মাদ্রাজী কুলী, পশ্চিমে গাড়োয়ান, শিখ পাহারাওয়ালা, সুরাটী, ইহুদী, পার্শী ও চীনে ব্যবসাদার। এখানকার আদত ব্রহ্মদেশী লোক গেল কোথায়? স্ত্রীলোকেরা দোকান করিতেছে দেখিলাম; কিন্তু পুরুষেরা কোথায়? অনেকক্ষণ আমি এ সমস্যার কিছুই মীমাংসা করিতে পারিলাম না।
রাস্তায় যে সকল ব্রহ্মবাসী পুরুষ দেখিলাম, তাদের ভিতর যেন প্রাণ নাই। দেহ তেজোহীন,—স্বাস্থ্যশূন্য। তাহাদিগকে দেখিয়া উৎসাহহীন, ভগ্নোদ্যম, ম্রিয়মান বলিয়া বোধ হইল। মধ্যে মধ্যে দুই একজন ব্রহ্ম যুবক টকটকে রঙের লুঙ্গা পরিয়া, মাথায় রেসমের চাদর বাধিয়া, সতেজে (Bicycle) বাইসাইকেল চড়িয়া যাইতেছিল বটে, অথবা কোন ধনী ব্রহ্মদেশীয় লোক সুসজ্জিত ব্রহ্মবাসিনী স্ত্রীলোকের সহিত ব্রুহাম গাড়ি চড়িয়া বেড়াইতে গোল বটে, কিন্তু অধিকাংশ বর্ম্মানকেই যেন ক্ষীণজীবী ম্রিয়মান বলিয়া মনে হ্ইল। ইহার কারণ কি?
ব্রহ্মদেশে স্ত্রীলোকের প্রভুত্ব অত্যধিক। তাঁহারাই বাহিরের কাজ কর্ম্ম সকল করিয়া থাকেন, দোকান রাখেন ও কেনা-বেচা করেন। তাঁহারা অল্প কারণেই (Divorce) বিবাহ-বিচ্ছেদ করিতে পারেন।