বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চৈতালি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সূচনা

নদীর প্রবাহের এক ধারে সামান্য একটা ভাঙা ডাল আটকা পড়েছিল। সেইটেতে ঘােলা জল থেকে পলি ছেঁকে নিতে লাগল। সেইখানে ক্রমে একটা দ্বীপ জমিয়ে তুললে। ভেসে-আসা নানা-কিছু অবান্তর জিনিস দল বঁধল সেখানে, শৈবাল ঘন হয়ে সেখানে ঠেকল এসে, মাছ পেল আশ্রয়, একপায়ে বক রইল দাঁড়িয়ে শিকারের লােভে; খানিকটুকু সীমানা নিয়ে একটা অভাবিত দৃশ্য জেগে উঠল— তার সঙ্গে চার দিকের বিশেষ মিল নেই। চৈতালি তেমনি এক-টুকরো কাব্য যা অপ্রত্যাশিত। স্রোত চলছিল যে রূপ নিয়ে, অল্প কিছু বাইরের জিনিসের সঞ্চয় জ’মে ক্ষণকালের জন্যে তার মধ্যে আকস্মিকের আবির্ভাব হল।

 পতিসরের নাগর-নদী নিতান্তই গ্রাম্য। অল্ তার পরিসর, মন্থর তার স্রোত। তার এক তীরে দরিদ্র লােকালয়, গােয়ালঘর, ধানের মরাই, বিচালির স্তূপ; অন্য তীরে বিস্তীর্ণ ফসল-কাটা শস্যখেত ধূ ধূ করছে। কোনাে-এক গ্রীষ্মকাল এইখানে আমি বােট বেঁধে কাটিয়েছি। দুঃসহ গরম। মন দিয়ে বই পড়বার মতাে অবস্থা নয়। বােটের জানলা বন্ধ ক’রে খড়খড়ি খুলে সেই ফাঁকে দেখছি বাইরের দিকে চেয়ে। মনটা আছে