বিনোদিনী কহিল, “তাহার নাম তুমি মুখে উচ্চারণ করিয়ো না।”
মহেন্দ্র। তাহারই জন্য তুমি পশ্চিমে ঘুরিয়া বেড়াইতেছ?
বিনোদিনী। তাহারই জন্য।
মহেন্দ্র। তাহারই জন্য তুমি এখানে অপেক্ষা করিয়া আছ?
বিনোদিনী। তাহারই জন্য।
মহেন্দ্র। তাহার ঠিকানা জানিয়াছ?
বিনোদিনী। জানি না, কিন্তু যেমন করিয়া হউক জানিবই।
মহেন্দ্র। কোনমতেই জানিতে দিব না।
বিনোদিনী। না যদি জানিতে দাও, আমার হৃদয় হইতে তাহাকে কোনমতেই বাহির করিতে পারিবে না।
এই বলিয়া বিনোদিনী চোখ বুজিয়া আপনার হৃদয়ের মধ্যে বিহারীকে একবার অনুভব করিয়া লইল।
মহেন্দ্র সেই পুষ্পভরণা বিরহবিধুমূর্তি বিনোদিনীর দ্বারা একই কালে প্রবলবেগে আকৃষ্ট ও প্রত্যাখ্যাত হইয়া হঠাৎ ভীষণ হইয়া উঠিল; মুষ্টি বন্ধ করিয়া কহিল, “ছুরি দিয়া কাটিয়া তোমার বুকের ভিতর হইতে তাহাকে বাহির করিব।”
বিনোদিনী অবিচলিত মুখে কহিল, “তোমার ভালোবাসার চেয়ে তোমার ছুরি আমার হৃদয়ে সহজে প্রবেশ করিবে।”
মহেন্দ্র। তুমি আমাকে ভয় কর না কেন, এখানে তোমার রক্ষক কে আছে।
বিনোদিনী। তুমি আমার রক্ষক আছ। তোমার নিজের কাছ হইতে তুমি আমাকে রক্ষা করিবে।
মহেন্দ্র। এইটুকু শ্রদ্ধা, এইটুকু বিশ্বাস, এখনো বাকি আছে!
বিনোদিনী। তা না হইলে আমি আত্মহত্যা করিয়া মরিতাম, তোমার সঙ্গে বাহির হইতাম না।
মহেন্দ্র। কেন মরিলে না― ঐটুকু বিশ্বাসের ফাঁসি আমার গলায় জড়াইয়া আমাকে দেশদেশান্তরে টানিয়া মারিতেছ কেন। তুমি মরিলে কত মঙ্গল হইত ভাবিয়া দেখো।
বিনোদিনী। তাহা জানি, কিন্তু যতদিন বিহারীর আশা আছে ততদিন আমি মরিতে পারি না।
মহেন্দ্র। যতদিন তুমি না মরিবে ততদিন আমার প্রত্যাশাও মরিবে না, আমিও নিষ্কৃতি পাইব না। আমি আজ হইতে ভগবানের কাছে সর্বান্তঃকরণে