পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ক্রমে রাত্রি নিবিড় হয়ে নৌকো ফেলত ঢেকে,
একটি কেবল দীপের আলো জ্বলত ভিতর থেকে।
শিকলে আর স্রোতে মিলে চলত টানের শব্দ,
স্বপ্নে যেন ব’কে উঠত রজনী নিস্তব্ধ।
পুবে হাওয়ার এল ঋতু, আকাশ-জোড়া মেঘ—
ঘরমুখো ঐ নৌকোগুলােয় লাগল অধীর বেগ।
ইলিশ মাছ আর পাকা কাঁঠাল জমল পারের হাটে,
কেনাবেচার ভিড় লাগল নৌকো-বাঁধা ঘাটে।
ডিঙি বেয়ে পাটের আঁঠি আনছে ভারে ভারে,
মহাজনের দাঁড়িপাল্লা উঠল নদীর ধারে।
হাতে পয়সা এল, চাষি ভাব্‌না নাহি মানে—
কিনে নতুন ছাতা জুতো চলেছে ঘর-পানে।
পরদেশিয়া নৌকোগুলাের এল ফেরার দিন,
নিল ভরে খালি-করা কেরােসিনের টিন—
একটা পালের ’পরে ছােটো আরেকটা পাল তুলে
চলার বিপুল গর্বে তরীর বুক উঠেছে ফুলে।
মেঘ ডাকছে গুরু গুরু, থেমেছে দাঁড় বাওয়া—
ছুটছে ঘােলা জলের ধারা, বইছে বাদল হাওয়া।

৬।৬।৩৭

আলমােড়া

৪১