পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
১৯৯

আপত্তি করবে কি। ‘উষ্ট্র’ যদি দুইমাত্রায় পদক্ষেপ করতে পারে তবে ‘এক্‌টি’ কী দোষ করেছে।[১]

 ‘জনগণমনঅধিনায়ক’ সংস্কৃত ছন্দে বাংলায় আমদানি।

 ১৩৩৮ ভাদ্র ৭

 ছন্দ সম্বন্ধে তুমি অতিমাত্র সচেতন হয়ে উঠেছ। শুধু তাই নয়, কোনো মতো নতুন ছন্দ তৈরি করাকে তুমি বিশেষ সার্থকতা বলে কল্পনা কর। আশা করি এই অবস্থা একদিন তুমি কাটিয়ে উঠবে এবং ছন্দ সম্বন্ধে একেবারেই সহজ হবে তোমার মন। আজ তুমি ভাগবিভাগ করে ছন্দ যাচাই করছ, প্রাণের পরীক্ষা চলছে দেহব্যবচ্ছেদ করে। যারা ছান্দসিক তাদের উপর এই কাটাঁছেড়ার ভার দাও, তুমি যদি ছন্দরসিক হও তবে ছুরিকাঁচি ফেলে দিয়ে কানের পথ খোলসা রাখ যেখান দিয়ে বাঁশি মরমে প্রবেশ করে।[২]

 গীতার একটা শ্লোকের আরম্ভ এই

অপরং ভবতো জন্ম,

ঠিক তার পরবর্তী শ্লোক

বহূনি মে ব্যতীতানি।[৩]

দ্বিতীয়টির সমান ওজনে প্রথমটি যদি লিখতে হয় তাহলে লেখা উচিত ‘অপারং ভাবতো জন্ম’। কিন্তু যাঁরা এই ছন্দ[৪] বানিয়েছিলেন তাঁরা ছান্দসিকের হাটে গিয়ে নিক্তি নিয়ে বসেননি। আমি যখন ‘পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা’ লিখেছিলুম তখন জানতুম কোনো কবির কানে খটকা লাগবে না, ছান্দসিকের কথা মনে ছিল না।

 ১০৩৯ মাঘ ১৩
  1. দ্রষ্টব্য ‘ছন্দের হসন্ত-হলন্ত’ প্রবন্ধের দ্বিতীয় পর্যায় পৃ ৫৯-৬১, ৬৪।
  2. তুলনীয়: চণ্ডীদাসের গানে...মরমে পৌঁছত না পৃ ৫৬।
  3. চতুর্থ অধ্যায়, চতুর্থ-পঞ্চম শ্লোক।
  4. অনুষ্টুপ্ বক্ত্র ছন্দ। ‘সংজ্ঞাপরিচয়’ দ্রষ্টব্য।