পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
ছন্দ

বেশি নেই। এর পরে আবার কোন খেয়াল আসবে বলতে পারিনে। যাঁরা দৈব দুর্যোগে মনে করবেন গদ্যে কাব্যরচনা সহজ তাঁরা এই খোলা দরজাটার কাছে ভিড় করবেন সন্দেহ নেই। তা নিয়ে ফৌজদারি বাধলে আমাকে স্বদলের লোক বলে স্বপক্ষে সাক্ষী মেনে বসবেন। সেই দুর্দিনের পূর্বেই নিরুদ্দেশ হওয়া ভালো। এর পরে মদ্রচিত আরো একথানা কাব্যগ্রন্থ বেরবে, তার নাম ‘বিচিত্রিতা’। সেটা দেখে ভদ্রলোকে এই মনে করে আশ্বস্ত হবে যে আমি পুনশ্চ প্রকৃতিস্থ হয়েছি।

 ১৩৩৯ দেওয়ালি

8

 সম্প্রতি কতকগুলো গদ্যকবিতা জড়ো করে ‘শেষসপ্তক’ নাম দিয়ে একখানি বই বের করেছি। সমালোচকরা ভেবে পাচ্ছেন না ঠিক কী বলবেন। একটা কিছু সংজ্ঞা দিতে হবে, তাই বলছেন আত্মজৈবনিক। অসম্ভব নয়, কিন্তু তাতে বলা হল না এগুলো কবিতা কিংবা কবিতা নয় কিংবা কোন্ দরের কবিতা। এদের সম্বন্ধে মুখ্য কথা যদি এই হয় যে এতে কবির আত্মজীবনের পরিচয় আছে তাহলে পাঠক অসহিষ্ণু হয়ে বলতে পারে, আমার তাতে কী। মদের গেলাসে যদি রংকরা জল রাখা যায় তাহলে মদের হিসাবেই ওর বিচার আপনি উঠে পড়ে। কিন্তু পাথরের বাটিতে রঙিন পানীয় দেখলে মনের মধ্যে গোড়াতেই তর্ক ওঠে ওটা শরবত না ওষুধ; এরকম দ্বিধার মধ্যে পড়ে সমালোচক এই কথাটার ’পরেই জোর দেন যে, বাটিটা জয়পুরের কি মুঙ্গেরের। হায় রে, রসের যাচাই করতে যেখানে পিপাসু এসেছিল সেখানে মিলল পাথরের বিচার। আমি কাব্যের পসারি, আমি শুধোই— লেখাগুলোর ভিতরে ভিতরে কি স্বাদ নেই, ভঙ্গি নেই, থেকে থেকে কটাক্ষ নেই, সদর দরজার চেয়ে এর খিড়কির দুয়ারের দিকেই কি ইশারা নেই, গদ্যের