পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৩৭

পর্ব। তার পরেই চার মাত্রার চলন বা পদক্ষেপের দৃষ্টান্ত (পৃ ৩৫) দিয়েছেন এবং অন্যত্রও (পৃ ৪০) এ-রকম চলনের উল্লেখ করেছেন। এ সব স্থলেও চলন মানে পর্ব। কিন্তু আবার দুই মাত্রার (সমমাত্রার) তথা তিন মাত্রার (অসমমাত্রার) চলনের কথাও বলা হয়েছে (পৃ ৩৫-৩৬)। সে সব স্থলে চলন মানে উপপর্ব। যেমন—‘নয়নধারায় | পথ সে হারায় | চায় সে পিছন | পানে’ এটাও ষড়ঙ্গী, কেননা এর প্রতিপদক্ষেপে ছয় মাত্রা। অন্য পরিভাষায় এর প্রতিপর্বে ছয় মাত্রা এবং প্রতিউপপর্বে তিন মাত্রা। সুতরাং এ স্থলে তিন মাত্রার চলন বলতে উপপর্বই বোঝাচ্ছে। সমচলন, অসমচলন, বিষমচলন প্রভৃতি কথায় (পৃ ৩৫-৩৬) চলন মানে উপপর্ব।

 চাল (পৃ ৩৪)—এটিও পারিভাষিক শব্দ নয়। ছন্দের পূর্ণযতির বিভাগ বা পংক্তিকেই বলা হয়েছে চাল। একএকটি পূর্ণযতির পরে প্রত্যেক ছন্দেরই পূর্ণরূপের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই এই পূর্ণযতির বিভাগ বা চালকে প্রদক্ষিণ বলেও অভিহিত করা হয়েছে। যেমন—

শরদচন্দ পবন মন্দ বিপিন ভরল কুসুমগন্ধ
ফুল্ল মল্লি মালতি যুথি মত্ত মধুপ ভোরনী।

এখানে “আটটি চলনে এই ছন্দের চাল সারা হচ্ছে।” অর্থাৎ আটটি পর্ব নিয়ে এই ছন্দের পূর্ণরূপ বা পংক্তি গঠিত হয়েছে; কেননা আট পর্বের পরেই উক্ত পূর্ণরূপের এক প্রদক্ষিণ সমাপ্ত হয়েছে, তার পরেই পুনরাবর্তন। সুতরাং এখানে চাল বা প্রদক্ষিণ মানে পূর্ণযতির বিভাগ অর্থাৎ পংক্তি। কিন্তু তার পরেই চাল বা প্রদক্ষিণ বলতে পংক্তি না বুঝিয়ে বোঝাচ্ছে দুই পংক্তি নিয়ে গঠিত শ্লোক বা যুগ্মক (couplet)। যেমন—

মহাভার | তের কথা | অমৃত স | মান।
কাশীরাম | দাস কহে | শুনে পুণ্য | বান