পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
ছন্দ

টোট্) আছে। সুতরাং ‘যুক্ত-অক্ষর অর্থাৎ যুগ্মধ্বনি’ কথায় মনে সংশয় জাগে যুগ্মধ্বনি শব্দটি হয়তো পারিভাষিক অর্থে গৃহীত হয়নি। অতঃপর যুক্তধ্বনি (পৃ ৮০), যুক্তবর্ণের ধ্বনি (পৃ ১২২), যুগ্মবর্ণ (পৃ ৬৮) প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ দেখে সন্দেহ থাকে না যুগ্মধ্বনি শব্দটি যুক্তাক্ষর অর্থে ই প্রযুক্ত হয়েছে। অক্ষর ও বর্ণ একার্থক। উভয়েরই একটি অর্থ letter। যথা—নিরক্ষর, বর্ণপরিচয়।

 যুক্তাক্ষর তথা যুক্তবর্ণ বলতে বোঝায় সংযুক্ত letter। রবীন্দ্রনাথ যুগ্মধ্বনি শব্দটিও ওই অর্থেই গ্রহণ করেছেন। তাই যুগ্মধ্বনি, যুক্তধ্বনি, যুগ্মবর্ণ ও যুক্তবর্ণ পরস্পরের প্রতিশব্দরূপে গণ্য হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি ধ্বনির প্রতিশব্দ হিসাবে স্বর কথাটিকেও অক্ষর, বর্ণ বা letter অর্থে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাই যুক্তাক্ষর অর্থে যুগ্মস্বর কথাটিও ব্যবহৃত হয়েছে (পৃ ৭২-৭৩)। বলা প্রয়োজন যে, যুগ্মস্বর কথাটির পারিভাষিক অর্থ closed vowel বা diphthong (পৃ ১৭১ পাদটীকা ৪ এবং পৃ ১৮১ পাদটীকা ২)। যথা—ঐ (=অই্), ঔ (=অউ্), অও্, ইউ্।

 অযুগ্মধ্বনি ও যুগ্মধ্বনি, এই শব্দদুটি অযুক্তাক্ষর ও যুক্তাক্ষর অর্থে গৃহীত হবার সম্ভাবনা আছে বলে ছন্দের আলোচনায় এ দুটির পরিবর্তে অন্য পরিভাষা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। অযুগ্মধ্বনি-যুগ্মধ্বনি অপেক্ষা মুক্তদল-রুদ্ধদল নাম দুটি সুষ্ঠুতর। তাতে অর্থগত অনিশ্চয়তা ঘটবার আশঙ্কা থাকে না। তেমনি অযুগ্মস্বর-যুগ্মস্বর না বলে মুক্তস্বর-রুদ্ধস্বর বলাই সংগত। অর্থাৎ অ আ ই উ এ ও প্রভৃতি একক স্বরকে মুক্তস্বর (open vowel) এবং ঐ (=অই্, ওই্), ঔ (=অউ্, ওউ্), অও্, আই্, ইউ্, উই্ প্রভৃতি জোড়াস্বরকে রুদ্ধস্বর (closed vowel) বলা যেতে পারে। দ্রষ্টব্য ‘অক্ষর’, ‘দল’, ‘ধ্বনি’ ও ‘সিলেব্‌ল্।’

 সিলেব্‌ল্‌এর মাত্রা পরিমাণ নির্ণয়-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,