পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
২৯৭

(পৃ ৬৩), তাকেই অন্যত্র বলা হয়েছে ‘তিনমাত্রার তাল’ (পৃ ২১৭)। আবার কোনো কোনো স্থলে লয়-তালের বিরোধও কল্পিত হয়েছে। যেমন, ‘লয়কে যদি মানি তবে তালের সঙ্গে বিবাদ ঘটিলেও ভয় করিবার প্রয়োজন নাই’ (পৃ ২৩), কিংবা ‘লয়ের হিসাব দিলেও তালের হিসাব মেলে না’ (পৃ ২৬)।

 বস্তুত রবীন্দ্রনাথ ‘লয়’ কথাটিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘স্পন্দন’ (পৃ ৩৩) বা rhythm অর্থে প্রয়োগ করেছেন। ছন্দের এই রিদ্‌ম্‌কে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে ‘ছন্দঃস্পন্দন’ (পৃ ১৪৭)। ছন্দোবদ্ধ রচনার মধ্যে যে ‘প্রাণের স্পন্দন চলতে থাকে, আমাদের চিৎস্পন্দন তার লয়টাকে স্বীকার করে, ঘটতে থাকে গতির সঙ্গে গতির সহযোগিতা বাতাসের হিল্লোলের সঙ্গে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো’ (পৃ ১৪৯)। এই স্পন্দন, হিল্লোল বা তরঙ্গই রবীন্দ্রস্বীকৃত অর্থে লয়ের মূলকথা। বেদমন্ত্রে যে ছন্দ প্রথম দেখা দিল, তার ‘ক্রিয়া কেবল জ্ঞানে নয়, তা প্রাণে মনে, স্মৃতির মধ্যে তা চিরকাল স্পন্দিত হয়ে বিরাজ করে। ছন্দের এই গুণ’ (পৃ ১৪৯)। অর্থাৎ স্পন্দন বা রিদ্‌ম্‌ই ছন্দের প্রধান গুণ। এই স্পন্দনগুণ যে-গদ্যরচনার প্রধান বিশিষ্টতা, সেই রিদ্‌মিক প্রোজই (পৃ ২১৮) গদ্যকবিতার বাহন। আর, এইজাতীয় গরচনার স্পন্দনলীলাকে বলা হয়েছে ‘গদ্যছন্দ’।

 এইজন্যই বলা হয়েছে, গদ্যকবিতার “মধ্যে ছন্দ নেই বললে অত্যুক্তি হবে, ছন্দ আছে বললেও সেটাকে বলব স্পর্ধা” (পৃ ২০৫)। এ কথার মানে গদ্যকাব্যে পদ্যের মতো ‘নিশ্চিত ছন্দ’ নেই, আছে তার ‘আভাস’মাত্র (পৃ ১৫২, ২০৫)। অর্থাৎ গদ্যকাব্যে সুনিয়মিত ছন্দ নেই; কিন্তু ছন্দের স্পন্দনলীলাটুকু, তার রিদ্‌ম্‌টুকু আছে। তাকে অন্যত্র বলা হয়েছে ‘ছন্দের গতিলীলা’ (পৃ ১৫২)। আবার রিদ্‌ম্ অর্থে স্পন্দন শব্দের পরিবর্তে ‘ভঙ্গি’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, কারুবিচারে