পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৪
ছন্দ
৩৪

৩৪ ছন্দ

এই কথাটাকেই আরেক ছন্দে লিখলে বিষয়টা ঠিকই থাকবে কিন্ত বিষয়ের চেয়ে বেশি যেটা, তার অনেকথানি বদল হবে।

শাবণমেঘে তিমিরঘন শর্বরী,

বরিষে জল কাননতল মমণরি | জলদরব-ঝংকারিত বঞ্ধীতে

বিজন ঘরে ছিলাম সুখতন্্রীতে, অলস মম শিথিল তন্ুবল্পরী।

মুখর শিবী শিখরে ফিরে সঞ্চরি ॥

এই ছন্দে হয়তো বাইরের ঝড়ের দোলা কিছু আছে কিন্তু মেয়েটির ভিতরের গভীর কথা ফুটল না। এ আরেক জিনিস হল।

ছন্দ কবিতার বিষয়টির চারদিকে আবর্তন করছে। পাতা যেমন গাছের ভাটার চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাল বেখে ওঠে এও সেই রকম। গাছের বস্তপদার্থ তার ডাঙ্পের মধ্যে গুড়ির মধ্যে মজ্জাগত হয়ে রয়েছে, কিন্ত তার লাবণা, তার চাঞ্চলা, বাতাসের সঙ্গে তার আলাপ, আকাশের সঙ্গে তার চাউনির বদল এ সমস্ত প্রধানত তার পাতার ছন্দে।

পৃথিবীর আহ্ছিক এবং বাধষিক গতির মতো কাব্যে ছন্দের আবর্তনের দুটি অঙ্গ আছে, একটি বড়ো গতি আর একটি ছোটো গতি। অর্থাৎ চাল এবং চলন। প্রদক্ষিণ এবং পদক্ষেপ । দৃষ্টান্ত দেখাই ।

শরদচন্দ পবন মন্দ, বিপিন ভরল ' কুন্থুমগন্ধ

এরই প্রত্যেকটি হল চলন। এমন আটটি চলনে এই ছন্দের চাল সারা হচ্ছে। অর্থাৎ ছয়ের মাত্রায় এ পা ফেলছে এবং আটের মাত্রায় ঘুরে আসছে। 'শরদচন্দ' এই কথাটি ছয় মাত্রার, 'শরদ” তিন এবং চন্দ'ও তিন। বলা বাহুগ্য, যুক্ত অক্ষরে ছুই অক্ষরের মাত্রা আছে, এই কারণে 'শরদচন্দ” এবং “বিপিন ভরল' ওজনে একই।