পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই ছেলেবেলায় যখন আরব্য উপন্যাস পড়তুম, সিন্ধ বাদ নানা নূতন দেশে বাণিজ্য করতে বাহির হত, ভূত্যশাসিত আমি তোষাখানার মধ্যে রুদ্ধ হয়ে বসে বসে ছুপুর বেলায় সিন্ধ বাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতুম, তখন যে আকাঙ্ক্ষাটা মনের মধ্যে জন্মেছিল সেটা যেন এখনও বেঁচে আছে— ওই বালিচরে নৌকো বাধা দেখলে সেই যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। ছেলেবেলায় যদি আরব্য-উপন্যাস রবিনসন-ত্রুসো না পড়তুম, রূপকথা না শুনতুম, তা হলে নিশ্চয় বলতে পারি, ওই নদীতীর এবং মাঠের প্রান্তের দূর দৃশু দেখে ঠিক এমন ভাব মনে উদয় হত না ; সমস্ত পৃথিবীর চেহারা আমার পক্ষে আর-একরকম হয়ে যেত। এইটুকু মানুষের মনের ভিতরে বাস্তবিকে কাল্পনিকে জড়িয়ে-মড়িয়ে কী-যে একটা জাল পাকিয়ে আছে ! কিসের সঙ্গে যে কী গেথে গেছে— কত গল্পের সঙ্গে, ছবির সঙ্গে, ঘটনার সঙ্গে, সামান্তের সঙ্গে, বড়োর সঙ্গে জড়িয়ে গিঠ পড়ে আছে— প্রতিদিন অজ্ঞাতে জড়িয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষের একটা বৃহৎ জীবনের জাল খুলতে পারলে কত ছোটো এবং কত বড়োর মিশোল আলাদা করা যায়। 〉、"