পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাত দিয়ে সমান করে বিছিয়ে রাখে নি। এই বিস্তীর্ণ বালির ও পারে একটি প্রান্তে একটুখানি শীর্ণ স্ফটিকস্বচ্ছ জল ক্ষীণস্রোতে বয়ে চলে যাচ্ছে। মঞ্জলের মেঘদূতে বিরহিণীর বর্ণনায় আছে যে, যক্ষপত্নী বিরহশয়নের একটি প্রান্তে লীন হয়ে আছে, যেন পূর্বদিকের শেষ সীমায় কৃষ্ণপক্ষের কৃশতম চাদটুকুর মতো। ৯৫-লে এই নদীটুকু দেখে বিরহিণীর যেন আর-একটি উপমা পাওয়া গেল। কটক থেকে পুরী পর্যন্ত পথটি খুব ভালো। পথ উচ্চে, তার দুই ধারে নিম্নক্ষেত্র। বড়ো বড়ো গাছে ছায়াময়। অধিকাংশ আমগাছ । এই সময়ে সমস্ত আমগাছে মুকুল ধরেছে, গন্ধে পথ আকুল হয়ে অাছে। অাম অশ্বখ বট নারিকেল এবং খেজুর গাছে ঘেরা এক-একটি গ্রাম দেখা যাচ্ছে । কোথাও বা স্বল্পজলা নদীর তীরে ছাপরওয়ালা গোরুর গাড়ি দাড়িয়ে আছে। গোলপাতার ছাউনির নীচে মেঠাইয়ের দোকান বসেছে ; পথের ধারে গাছের তলায় এবং শ্রেণীবদ্ধ কুঁড়েঘরের মধ্যে যাত্রীরা খাওয়াদাওয়া করছে ; ভিক্ষুকের দল নতুন যাত্রী ও গাড়ি পান্ধি দেখবামাত্র বিচিত্র কণ্ঠে ও ভাষায় আর্তনাদ করতে আরম্ভ করছে। যত পুরীর নিকটবর্তী হচ্ছি তত পথের মধ্যে যাত্রীর সংখ্য। বেশি দেখতে পাচ্ছি। ঢাকা গোরুর গাড়ি সারি সারি চলেছে। রাস্তার ধারে, গাছের তলায়, পুকুরের পাড়ে লোক শুয়ে আছে, রাধছে, জটলা করে রয়েছে। মাঝে মাঝে মন্দির, পান্থশালা, বড়ো বড়ো পুষ্করিণী। পথের ডান দিকে একটা খুব মস্ত বিলের মতো— তার ও পারে পশ্চিমে গাছের মাথার উপর জগন্নাথের মন্দিরচুড়া দেখা যাচ্ছে । হঠাৎ এক জায়গায় গাছপালার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়েই সুবিস্তীর্ণ বালির তীর এবং ঘন নীল সমুদ্রের রেখা দেখতে পাওয়া গেল । У ф o