brసి ইছামতী ৭ জুলাই ১৮৯৩ কাল সমস্ত দিন বেশ পরিষ্কার ছিল। অনেক দিন পরে মেঘ কেটে রৌদ্রে দশ দিক উজ্জল হয়ে উঠেছিল; প্রকৃতি যেন স্নানের পর নতুনধোওয়া বাসন্তী রঙের কাপড়টি পরে পরিচ্ছন্ন প্রসন্ন প্রফুল্ল মুখে ভিজে চুলটি মৃত্যুমন্দ বাতাসে শুকোচ্ছিলেন। কাজ সেরে বেলা সাড়ে চারটে-পাচটার সময় যখন বোট ছেড়ে দিলুম তখন পূর্বদিকে খুব একটা গাঢ় মেঘ উঠল। ক্রমশ একটু বাতাস এবং বৃষ্টিও যে হয় নি তা নয়। সেই শাখানদীটার ভিতরে যখন ঢুকলুম, বৃষ্টি ধরে গেল। জলে চর ভেসে গেছে— মানুষপ্রমাণ লম্বা ঘাস এবং ঝাউবনের ভিতর দিয়ে সর সর শব্দে গুণ টেনে বোট চলতে লাগল। খানিক দূরে গিয়ে অনুকূল বাতাস পাওয়া গেল। পাল তুলে দিতে বললুম, পাল তুলে দিলে। ছ দিকে ঢেউ কেটে কল কল শব্দ তুলে বোট সগর্বে চলে যেতে লাগল। আমি বাইরে চৌকি নিয়ে বসলুম। সেই নিবিড় নীল মেঘের অন্তরালে অর্ধনিমগ্ন জলশূন্য চর এবং পরিপূর্ণ দিগন্তপ্রসারিত নদীর মধ্যে সূর্যাস্ত যে কী জিনিস সে আমি বর্ণনা করতে চেষ্টা করব না। বিশেষত আকাশের অতিদূর প্রান্তে পদ্মার জলরেখার ঠিক উপরেই মেঘের যেখানে ফাক পড়েছে সেখানটা এমনি অতিমাত্রায় সূক্ষ্মতম সোনালিতম হয়ে দেখা দিয়েছিল, সেই স্বর্ণপটের উপর সারি সারি লম্বা কৃশ গাছগুলির মাথা এমনি সুকোমল সুনীল রেখায় অঙ্কিত হয়েছিল— প্রকৃতি সেখানে যেন আপনার চরম পরিণতিতে পৌছে একটা কল্পলোকের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। মাঝি জিজ্ঞাসা করলে, বোট চরের কাছারিঘাটে রাখব কি ? আমি বললুম, না পদ্মা পেরিয়ে চল। মাঝি পাড়ি দিলে— বাতাস বেগে বইতে লাগল, ➢ ግሯ»
পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৮১
অবয়ব