পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ግ কালিগ্রাম জানুয়ারি ১৮৯১ কাল যখন কাছারি করছি, গুটি পাচ-ছয় ছেলে হঠাৎ অত্যন্ত সংযত ভাবে আমার সামনে এসে দাড়ালে ; কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে না করতে একেবারে বিশুদ্ধ বঙ্গভাষায় আরম্ভ করে দিলে, ‘পিতঃ, অভাগ্য সন্তানগণের সৌভাগ্যবশতঃ জগদীশ্বরের কৃপায় প্রভুর পুনর্বার এতদ্দেশে শুভাগমন হইয়াছে।’ এমনি ক’রে আধ ঘণ্টাকাল বক্তৃত ক’রে গেল ; মাঝে মাঝে মুখস্থ বক্তৃত ভুলে যাচ্ছিল, আবার আকাশের দিকে চেয়ে সংশোধন ক’রে নিচ্ছিল। বিষয়টা হচ্ছে, তাদের স্কুলে টুল ও বেঞ্চির অপ্রতুল হয়েছে— ‘সেই কাষ্ঠাসন-অভাবে আমরাই বা কোথায় উপবেশন করি, অামাদের পূজনীয় শিক্ষকমহাশয়ই বা কোথায় উপবেশন করেন, এবং পরিদর্শকমহাশয় উপস্থিত হইলে তাহাকেই বা কোথায় আসন দান করা যায় ? ছোট্টো ছেলের মুখে হঠাৎ এই অনর্গল বক্তৃতা শুনে আমার এমনি হাসি পাচ্ছিল। বিশেষত এই জমিদারি কাছারিতে, যেখানে অশিক্ষিত চাষার নিতান্ত গ্রাম্য ভাষায় আপনাদের যথার্থ দারিদ্র্যদুঃখ জানায়, যেখানে অতিবৃষ্টি-ফুর্ভিক্ষে গোরু বাছুর হাল লাঙল বিক্রি করেও উদরামের অনটনের কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে ‘অহরহ’ শব্দের পরিবর্তে রিহরহ’, ‘অতিক্রমের’ স্থলে অতিক্ৰয়’ ব্যবহার, সেখানে টুল বেঞ্চির অভাবে সংস্কৃত বক্তৃতা কানে এমনি অদ্ভুত শোনায়। অন্যান্য আমলা এবং প্রজারা এই ছোকরার ভাষার প্রতি এতাদৃশ দখল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল ; তারা মনে মনে আক্ষেপ করছিল, ‘বাপ-মা’রা আমাদের যত্ন ক’রে লেখাপড়া শেখায় নি, নইলে আমরাও জমিদারের সামনে দাড়িয়ে এই