পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদ। ২০শে জুলাই, ১৮৯২ । আজ এইমাত্র প্রাণটা যাবার যো হয়েছিল । পাণ্টি থেকে শিলাইদ যাচ্ছিলুম, বেশ পাল পেয়েছিলুম, খুব হুহুঃ শব্দে চলে আসছিলুম। বর্ষার নদী চারদিকে থই থই করচে এবং হৈ হৈ শব্দে ঢেউ উঠচে আমি মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখচি এবং মাঝে মাঝে লেখা পড়া করচি। বেলা সাড়ে দশটার সময় গড়ই নদীর ব্রিজ দেখা গেল । বোটের মাস্তুল ব্রিজে বাধবে কিনা তাই নিয়ে মাঝিদের মধ্যে তর্ক পড়ে গেল—ইতিমধ্যে বোট ব্রিজের অভিমুখে চলেছে । মাঝিদের আশা ছিল যে, আমরা স্রোতের বিপরীতমুখে যখন চলেছি তখন ভাবনা নেই—কারণ ব্রিজের কাছাকাছি এসেও যদি দেখা যায় যে মাস্তুল বাধবে তখনই পাল নাবিয়ে দিলে বোট স্রোতে পিছিয়ে যাবে । কিন্তু ব্রিজের কাছে এসে আবিষ্কার করা গেল মাস্তুল ঠেকবে এবং সেখানে একটা আওড় ( আবৰ্ত্ত ) আছে । সেই আওড় থাকাতে সেখানে স্রোতের গতি বিপরীত মুখে হয়েছে । তথন বোঝা গেল সামনে একটি বিপদ উপস্থিত কিন্তু বেশিক্ষণ চিন্তা করবার সময় ছিল না— দেখতে দেখতে বোট ব্রিজের উপর গিয়ে পড়ল। মাস্তুল মড়মড় করে ক্রমেই কাত হতে লাগল –আমি হতবুদ্ধি মাল্লাদের ক্রমাগত বলচি তোর ওখান থেকে সর, মাথায় মাস্তুল তেঙে মরবি না কি ! এমন সময় আর একটা নেীকে তাড়াতাড়ি দাড় বেয়ে এসে আমাকে তুলে নিলে এবং রসি নিয়ে আমার বোটটাকে টানতে লাগল—তপৃসি এবং আর একজন মাল্লা রসি দাতে কামড়ে সাংরে ডাঙায় উঠে টানতে লাগল—সেখানে আরো অনেক লোক জমা হয়ে বোট টেনে তুল্লে । সকলে ডাঙায় ভিড়করে এসে বল্লে আল্লা বাচিয়ে দিয়েছেন নইলে বাচবার কোনো কথা ছিল না । সমস্তই জড় পদার্থের কাগু কিনা—আমরা হাজার কাতর হই, চেচাই, লোহাতে যখন কাষ্ঠ ঠেক্ল এবং নীচের থেকে যখন জল ঠেলুতে লাগল, তখন যা হবার তা হবেই,—জলও এক মুহূৰ্ত্ত থামল না, মাস্তুলও একচুল মাথা নীচু করল না, লোহার ব্রিজও যেমন তেমনি দাড়িয়ে রইল । سبا- ہ حـاسـ