পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর । ফেব্রুয়ারি, ১৮৯১ । আমার সামনে নানারকম গ্রাম্য দৃশ্ব দেখতে পাই, সেগুলো আমার দেখতে বেশ লাগে। ঠিক আমার জানলার সুমুখে খালের ওপারে একদল বেদে বাখারির উপর খানকতক দরমা এবং কাপড় টাঙিয়ে দিয়ে তারি মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেচে। গুটিতিনেক খুব ছোট্ট ছোট্ট ছাউনিমাত্র—তার মধ্যে মানুষের দাড়াবার যে নেই—ঘরের বাইরেই তাদের সমস্ত গৃহকৰ্ম্ম চলে—কেবল রাত্তিরে সকলে মিলে কোন প্রকারে জড়পুটুলি হয়ে সেই ঘরের মধ্যে ঘুমতে যায়। বেদে জাতটাই এই রকম। কোথাও বাড়ি ঘর নেই, কোন জমিদারকে খাজনা দেয় না, একদল শুয়োর, গোটা ছয়েক কুকুর এবং কতকগুলো ছেলেমেয়ে নিয়ে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায় । পুলিস্ সৰ্ব্বদা এদের উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে । আমাদের এখানে যার আছে, আমি জানলায় দাড়িয়ে প্রায় তাদের কাজকৰ্ম্ম দেখি । এদের দেখতে মন্দ নয়, হিন্দুস্থানী ধরণের । কালো বটে কিন্তু বেশ শ্ৰী আছে, বেশ জোরালো সুডোল শরীর। মেয়েদেরও বেশ দেখতে—ছিপছিপে লম্ব আঁটিসাট, অনেকটা ইংরেজ মেয়েদের মত শরীরের স্বাধীন ভঙ্গী, অর্থাৎ বেশ অসঙ্কোচ চালচলন, নড়াচড়ার মধ্যে সহজ সরল দ্রুতভাব আছে—আমার ত ঠিক মনে হয় কালো ইংরেজের মেয়ে । পুরুষটা রান্না চড়িয়ে দিয়ে বসে বসে বঁাশ চিরে চিরে ধামা চাঙারি কুলো প্রভূতি তৈরি করচে—মেয়েটা কোলের উপর একটি ছোট্ট আয়না নিয়ে অত্যন্ত সাবধানে একটি গামছা ভিজিয়ে মুখটি বিশেষ যত্নের সঙ্গে দু তিনবার করে মুছলে, তার পরে আঁচল টাচল গুলো একটু ইতস্ততঃ টেনে টুনে সেরে স্বরে নিয়ে বেশ ফিট্‌ফাট হয়ে পুরুষটার কাছে উবু হয়ে বস্থল, তার পরে একটু আধটু কাজে হাত দিতে লাগল। এরা নিতান্তই মাটির সস্তান, নিতান্তই পৃথিবীর গায়ের সঙ্গে লেগে আছে—যেখানেসেখানে জন্মাচ্চে, পথে পথেই বেড়ে উঠচে, এবং যেখানে-সেখানে মরচে, এদের ঠিক