পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর । বিকেলবেলায় আমি এখানকার গ্রামের ঘাটের উপরে বোট লাগাই । অনেক গুলো ছেলে মিলে খেলা করে, বসে বসে দেখি । কিন্তু আমার সঙ্গে সঙ্গে নিশিদিন যে পদাতিক সৈন্ত লেগে থাকে তাদের জালায় আর আমার মনে সুখ নেই । ছেলেদের খেলা তারা বেআদবী মনে করে ; মাঝিরা যদি আপনাদের মধ্যে মন খুলে হাসি গল্প করে সেটা তার রাজার প্রতি অসন্মান জ্ঞান করে ; চাষার যদি ঘাটে গরুকে জল থাওয়াতে নিয়ে আসে তারা তৎক্ষণাৎ লাঠি হাতে করে রাজমর্য্যাদা রক্ষা করতে ধাবিত হয়। অর্থাৎ রাজার চতুৰ্দ্দিকটা হাসিহীন খেলাহীন শব্দহীন জনহীন ভীষণ মরুভূমি করতে পারলে তাদের মনের মত রাজসন্ত্রম রক্ষা হয় । কালও তারা ছেলেদের তাড়া করতে উদ্যত হয়েছিল, আমি আমার রাজমর্য্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের নিবারণ করলুম। ঘটনাটা হচ্চে এই— ডাঙার উপর একটা মস্ত নৌকার মাস্তুল পড়ে ছিল—গোটা কতক বিবস্ত্র ক্ষুদে ছেলে মিলে অনেক বিবেচনার পর ঠাওরালে, যে যদি যথোচিত কলরবসহকারে সেইটেকে ঠেলে ঠেলে গড়ান যেতে পারে তাহলে খুব একটা নতুন এবং আমোদজনক খেলার স্বষ্টি হয় । যেমন মনে আসা, অমনি কাৰ্য্যারম্ভ, “সাবাস জোয়ান্‌—হেঁইয়ো ! মারো ঠেলা হেঁইয়ে৷ ” মাস্তুল যেমনি একপাক ঘুরচে অমনি সকলের আনন্দে উচ্চহাস্য । কিন্তু এই ছেলেদের মধ্যে যে দুটিএকটি মেয়ে আছে, তাদের ভাব আরএকরকম । সঙ্গীঅভাবে ছেলেদের সঙ্গে মিশতে বাধ্য হয়েচে কিন্তু এই সকল শ্রমসাধ্য উৎকট খেলায় তাদের মনের যোগ নেই । একটি ছোট মেয়ে বি নাবাক্যব্যয়ে গম্ভীরপ্রশাস্তভাবে সেই মাস্তুলটার উপর গিয়ে চেপে বসল। ছেলেদের এমন সাধের খেল মাটি । দুইএকজন ভাবলে এমনস্থলে হারমানাই ভাল ; তফাতে গিয়ে তারা মানমুখে সেই মেয়েটির অটল গাম্ভীৰ্য্য নিরীক্ষণ করতে লাগল । ওদের মধ্যে একজন এসে পরীক্ষাচ্ছলে মেয়েটাকে একটুএকটু ঠেলতে চেষ্টা করলে । কিন্তু সে নীরবে নিশ্চিস্ত মনে বিশ্রাম করতে লাগল । সৰ্ব্বজ্যেষ্ঠ ছেলেটি এসে তাকে বিশ্রামের