পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ১লা অক্টোবর, ১৮৯১ । বেলায় উঠে দেখলুম চমৎকার রোদর উঠেছে এবং শরতের পরিপূর্ণ নদীর জল তল তল থৈ থৈ করচে। নদীর জল এবং তীর প্রায় সমতল –ধানের ক্ষেত সুন্দর সবুজ এবং গ্রামের গাছপালাগুলি বর্ষাবসানে সতেজ এবং নিবিড় হয়েউঠেছে । এমন সুন্দর লাগ ল সে আর কি বল্ব। দুপুরবেলা খুব এক পস্লা বৃষ্টি হয়েগেল। তার পরে বিকেলে পদ্মারাধারে আমাদের নারকেল বনের মধ্যে সূৰ্য্যাস্ত হ’ল । আমি নদীর ধারে উঠে আস্তেআস্তে বেড়াচ্ছিলুম। আমার সামনের দিকে দূরে আমবাগানে সন্ধ্যার ছায় পড়েআসচে এবং আমার ফেরবার মুখে নারকেল গাছগুলির পিছনে তণকাশ সোনায় সোনালী হয়ে উঠেছে। পৃথিবী যে কি আশ্চৰ্য্য সুন্দরী এবং কি প্রশস্তপ্রাণে এবং গভীরভাবে পরিপূর্ণত এইখানে না এলে মনেপড়ে না। যখন সন্ধ্যাবেল বোটের উপর চুপকরে বসেথাকি, জল স্তব্ধ থাকে, তীর আবছায়া হয়ে আসে, এবং আকাশের প্রাস্তে স্থৰ্য্যাস্তের দীপ্তি ক্রমেক্রমে মান হয়েযায়, তখন আমার সৰ্ব্বাঙ্গে এবং সমস্ত মনের উপর নিস্তব্ধ নতনেত্র প্রকৃতির কি একটা বৃহৎ উদার বাক্যহীন স্পর্শ অনুভবকরি ! কি শাস্তি, কি স্নেহ, কি মহত্ব, কি অসীম করুণাপূর্ণ বিষাদ । এই লোকনিলয় শস্যক্ষেত্ৰথেকে ঐ নির্জন নক্ষত্ৰলোকপর্য্যন্ত একটা স্তম্ভিত হৃদয়রাশিতে আকাশ কানায়কানায় পরিপূর্ণ হয়েওঠে ; আমি তার মধ্যে অবগাহনকরে অসীম মানসলোকে একলা বসেথাকি, কেবল মৌলবীটা পাশে দাড়িয়ে অবিশ্রাম বক্‌ বক করে আমাকে ব্যথিত করেতোলে । மைய 0 ை