পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ
১১৫

বিনোদলাল কোন না কোন ওজর করিতেন, আসল কথা চারুশীলাকে ছাড়িয়া তিনি এক দিনের জন্যও একাকী থাকিতে চাহিতেন না। তাহা দেখিয়া তারাকান্ত সুশীলার বিবাহ দিয়া ছোট জামাতাকে ঘর-জামাই করিয়া রাখেন। পুত্রাদি আর কেহই না থাকায় সুশীলাকে তিনি কাছছাড়া করিতে পারিলেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ বিবাহের অল্প দিন পরেই জামাতার স্বভাবে একটি বিলক্ষণ দোষ জন্মিল। দয়ানন্দ কি প্রকারে মদ্যপানে শিক্ষিত হইলেন। সুশীলা তাঁহাকে সংশোধনের অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইলেন না। একদিন কোথা হইতে দয়ানন্দ মদ খাইয়া গৃহে আসিয়া ভৃত্যকে পুনরায় মদ আনিতে আদেশ করায়, সুশীলা ভৃত্যকে বারণ করিয়াছিলেন। তাহাতে দয়ানন ক্রুদ্ধ হইয়া, সেই মত্ত অবস্থায় সুশীলাকে প্রহার করেন। এই কথা কি করিয়া তারাকান্তের কর্ণে উঠে। তিনি জামাতার আচরণে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া, তাঁহাকে কটূক্তি করেন। দয়ানন্দ ইহাতে অত্যন্ত অপমান বোধ করিলেন। ভাবিলেন তিনি শ্বশুরের অন্নভোজী না হইলে, শ্বশুর তাঁহার প্রতি এরূপ দাসের ন্যায় ব্যবহার করিতে পারিতেন না। অপমানিত হইয়া সেই দিনই তিনি শ্বশুরালয় ত্যাগ করিলেন। তাহাতে সুশীলার অত্যন্ত মনস্তাপ হইল। যাইবার সময় স্বামী সুশীলাকে বলিলেন সুশীলা, আমি তোমাকে বিবাহ করে অন্যায় করেছি, আমরা সমকক্ষ নই। আমি দরিদ্র, তুমি ধনবানের কন্যা। নামে আমি তোমার ভর্ত্তা কিন্তু আসলে ভরণপোষণ কর তুমি। মুখের কথায় আমি তোমার প্রভু, কিন্তু আসলে আমি তোমার দাস মাত্র। পুরুষের পক্ষে এরূপ জীবন কতদূর হেয় ঘৃণাস্পদ এতদিনে তা আমি খুবই বুঝছি। আমি বিদায় হই, তুমি পিত্রালয়ে সুখে থাক।” এই কথায় স্বামীর সমস্ত অসদ্ব্যবহার ভুলিয়া সুশীলা কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন “তুমি দরিদ্র, তবে আমি কি? আমিও দরিদ্রের পত্নী। পিতার ধন আছে তাঁরি