পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
ছিন্নমুকুল

 কনক নীরজার দিকে অবাক হইয়া চাহিয়া চাহিয়া তাহার গানটি শেষ হইলে একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল—

 “দাদার কাছে শিখেছিস্, বেশ করেছিস্, এখন এদিকে মুখ ফিরিয়ে আমার যে কাজ বাড়ালি, তার কি বল্ দেখি? তুই ভাই, আজ দেখছি কোন মতে ভাল করে চুল বাঁধতে দিবিনে।”

 নীরজা অপ্রস্তুত হইয়া হাসিয়া বলিল “তোর দাদার কথায় আমার ভাই জ্ঞান থাকে না; না, ভাই, আর করব না, এবার বেঁধে দে।”

 নীরজার অসাবধানতার অর্দ্ধবিনায়িত একটি বিনুনী যে কনকের হস্তচ্যুত হইয়া অল্প খুলিয়া গিয়াছিল, সেইটি কনক আবার হস্তে তুলিয়া বিনাইতে বিনাইতে বলিল—“গানটি ভাই কিন্তু বেশ। গানটি গেয়ে বুঝি দাদা তোর অভিমান ভাঙ্গিয়েছিলেন? অত অভিমান করিস্ কেন, ভাই?”

 নী। তুই অত দুঃখ করিস্ কেন ভাই।

 ক। নে, ভাই, তুই আবার আমার অত দুঃখ পেলি কোথা?

 নী। পাব আর কোথা? দেখতে পাই। ছিঃ! ভাই দাদার উপর কি মিছে দুঃখ কর্‌তে আছে? তাঁর হোল কনকগত প্রাণ।

 ক। অল্পেতেই কথায় কথায় তোর যে অভিমান, কনকগত প্রাণ হলে কি আর রক্ষা থাকত।

 নী। না, ভাই, তাতে কি অভিমান করি? এখন বাসেন না তাই, দেখা যেত, বাসলে কর্‌তিস্ কি না।

 নীরজা বলিল “আমার সোনার চাঁদ কনক, তোকে পেয়েছি কত ভাগ্যি, তোকে ভালবাসলে কি রাগ করতুম? আমার ভাই ভাগ্যি যে তুই জলে ডুবে মরিসনি, তা হলে এমন করে বসে কার সঙ্গে গল্প করতুম? আচ্ছা, ভাই কনক, তোকে তীরে দেখে যখন হিরণকুমার বোটে তুলে নিয়ে গেল, তখন তোর কি একটুও জ্ঞান ছিল না?”