পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১৩

রজনীর নিস্তব্ধতা অরণ্যের ভীষণতা দূর করিয়া কোন্ উপ্যাসের কোন্ পরী রাণী এ— এসময় এই কাননে আসিয়া উদয় হইলেন?

 রমণী গাহিতে গাহিতে বন-মধ্যে ভ্রমণ করিতে লাগিল, যুবকেরা বিস্মিত নেত্রে তাহাকে দেখিতে লাগিলেন। বালিকার পৃষ্ঠে লম্বিত বেণী, অঙ্গে আকণ্ঠলগ্ন ক্ষুদ্র অঙ্গরক্ষা, পরিধানে জটিল গ্রন্থিযুক্ত কুঞ্চনবহুল গৈরিকবসন; বেশভূষায় বালা হিন্দুস্থানী ললনা; কিন্তু তৎকণ্ঠনির্গত গীতপদাবলীর উচ্চারণবিশুদ্ধতায় সে বঙ্গবালারূপে স্বপ্রকাশ।

 অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁহাদের যেন মোহ ভাঙ্গিল, তাঁহারা উঠিয়া দাঁড়াইলেন, রমণীকে কি জিজ্ঞাসা করিবার অভিপ্রায়ে তাহার নিকটে গমন করিলেন। রমণী বনমধ্যে রজনীকালে অপরিচিত বন্দুকধারী মনুষ্য মূর্ত্তি দেখিয়া সহসা সভয়ে সবিস্ময়ে গান বন্ধ করিল। যামিনীনাথ সবিনয়ে বলিলেন—

 “আমরা শীকার করতে এসে পথ হারিয়েছি—আপনি বোধহয় এখানকার অধিবাসিনী, অনুগ্রহ করে পথ বলে দিতে পারেন?”

 বালা তখন আশ্বস্তচিত্তে উত্তর করিল—“পথ? আপনারা কে? কোথায় যাবেন?”

 প্রমোদ কোনও কথা কহিলেন না; সেই নিস্তব্ধ নিশীথে, জোৎস্নালোকিত অরণ্যে জ্যৎস্নামধুর রমণীমূর্ত্তি তাঁহাকে বিস্ময়াভিভূত করিয়াছিল। যামিনী বলিলেন—“আমরা কে তা চিনবেন্ না, অদৃষ্টফেরে এখানে শীকার করতে এসে পথ হারিয়েছি—এখন আপনার শরণাপন্ন—যদি এ গোলকধাঁধা থেকে নিষ্কৃতি দিতে পারেন তবেই আমরা নদীতীরে পৌঁছতে পারি”।

 রমণী বলিল—“নদীতীরে? তা পারি,—আমার সঙ্গে আসুন।”

 বালিকার অনুসরণে বন্ধু দুইজন অনতিবিলম্বে নদীকূলে আসিয়া পৌঁছিলেন। কিন্তু সেখানে একখানি খেয়ানৌকাও নাই—নদীও